দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় সিকৃবির সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ০১, ২০২০
০১:১৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ০১, ২০২০
০১:১৮ পূর্বাহ্ন



দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় সিকৃবির সাফল্য

হাওড়-বাওড়বেষ্টিত সিলেট অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। মনুষ্যসৃষ্ট কারণে মাছের আশ্রয়স্থল, প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ প্রজনন মৌসুমে অবাধে মাছ শিকারের ফলে অসংখ্য প্রজাতির দেশীয় মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। তাই দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। অভয়াশ্রম স্থাপনের মাধ্যমে সাফল্যও এসেছে। 

বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় মাছের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিস্তার, জীববৈচিত্র রক্ষা এবং মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। প্রসাশন, বন বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের আওতায় এনএটিপি ফেজ ২ প্রকল্পের (আইডি নং ৩৫) অর্থায়নে সিকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে উক্ত বিভাগের প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ড. ফয়সাল আহমেদের নেতৃত্বে সারি-গোয়াইন নদী ও তৎসংলগ্ন হাওড় ও বিলসমূহে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। 

এ উদ্দেশে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে এবং গুরকচি নদীতে প্রায় ৩ একর জায়গায় অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। গুরকচি অভয়াশ্রমে ৫০জন এবং রাতারগুলে ৩০ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা কমিটি। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে এলাকার জনগণ। অভয়াশ্রম তৈরির ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ নতুন করে এসব এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চিতল, ঘোড়া, খারি, নানিদ প্রভৃতি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান শীতকালে পানি কমে যাওয়ায় মাছগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তাই রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের একটি বিলে এবং গুরকচি নদীতে অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। অভয়াশ্রমের পাশে জাল ও বাঁশসহকারে স্থাপিত পেনে কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদী থেকে ডিমওয়ালা মলা ও ঢেলা মাছ সংগ্রহ করার পর তাদের প্রজনন মৌসুম এপ্রিল ও মে দুই মাস পেন পদ্ধতিতে লালন পালন করে প্রজনন সম্পন্ন হলে জুন মাসে পেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে ভরা বর্ষায় আশপাশের জলাশয়ে এসব মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দ্বারা অভয়াশ্রমগুলো ব্যবস্থাপনা করার ফলে সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি মৎসজীবীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে উন্মুক্ত জলাশয়ে বর্ষা মৌসুমে খাঁচায় (কেজ কালচার) মাগুর, পাবদা, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ চাষ করা হচ্ছে। চাষকৃত এ মাছ বিক্রি করে অংশীজন মৎসজীবীদের টেকসই আয়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সেলাই মেশিন, ছাগল ও ভেড়াসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। 

প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ‘শুষ্ক মওসুমে উন্মুক্ত জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের আশ্রয়স্থল দিনদিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া হাওড় ও বিল সেচ দিয়ে শুকিয়ে অবাধে মাছ শিকারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে মলা ঢেলাসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ। পেনে এ সকল দেশীয় প্রজাতির মাছ লালন-পালন করায় তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে বংশবিস্তার করতে পারছে। পরবর্তীতে বর্ষায় উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেওয়ায় খুব সহজেই বিলুপ্ত প্রজাতির এ সব মাছের বিস্তার ঘটানো সম্ভব হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য মাছও বৃদ্ধি পাচ্ছে।   

বিএ-০২