সিলেটে হাফ ম্যারাথন: মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ২৩, ২০২১
০১:৫২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৩, ২০২১
০১:৫২ পূর্বাহ্ন



সিলেটে হাফ ম্যারাথন: মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংহতি
# জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের পরিণতি খুব খারাপ হয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী, # জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল করব: র‌্যাব মহাপরিচালক

হাফ ম্যারাথন সিলেট। ছবি: এসআরসি

ডুয়াথলন ও ট্রায়াথলন পেরিয়ে হাফ ম্যারাথন। এসব প্রতিযোগিতা সিলেটে বার্ষিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে প্রতিযোগিতা আয়োজন করায় ব্যাপক সাড়া মিলছে। ‘র‌্যাব ফোর্সেস সিলেট হাফ ম্যারাথন’ ঘিরেও ছিল উৎসব। চলচ্চিত্র তারকাদের উপস্থিতি উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। তবু এসবের বাইরেও অনেক প্রতিযোগী কেবল মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংহতি জানাতে ম্যারাথনে অংশ নেন।

মুজিববর্ষে তরুণদের মাদক ও সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে রাখতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘র‌্যাব ফোর্সেস সিলেট হাফ ম্যারাথন’।

প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। যে একবার সন্ত্রাসী হয়, তার জীবনের পরিণতি হয় খুব খারাপ। সে নিজের শত্রু, পরিবারের শত্রু, সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু। এমনকি তার মৃত্যুর সময়ও কেউ ধারে কাছে আসে না। সুতরাং, যারা তরুণ, অবশ্যই আপনারা সন্ত্রাসবাদের বাইরে থাকবেন এবং মাদকের ধারেকাছে যাবেন না। মাদক বা সন্ত্রাস যেকোনো সময় যেকোনো ঘরে আস্তানা গড়ে তুলতে পারে।’

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি মাদক বিরোধী শপথ বাক্য পাঠ করান। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত এবং মাদকাসক্তদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাইছি। আমরা সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক নির্মূল করব।’

অনুষ্ঠানে বাউল কালা মিয়া, চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমর সানী, আরিফা পারভীন জামান মৌসুমী, রিয়াজ, সিয়াম আহমেদ এবং মাহিয়া মাহি বক্তব্য দেন।

অভিনেতা ওমর সানী বলেন, ‘জীবনের একটা সময়ে আমরাও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসতে পেরেছি। দর্শকদের ভালোবাসায় গত ৯ বছরে একটিও সিগারেট স্পর্শ করিনি। যারা এখনও মাদকের স্পর্শে রয়েছেন, তাদের ফিরে আসতে বলব। খুব কঠিন কিছু নয়, ইচ্ছে থাকলেই ফিরে আসা সম্ভব।’

অভিনেতা রিয়াজ বলেন, ‘জঙ্গিবাদ আমাদের দেশে একটা সময় ছিল। বর্তমানে সেটা নেই। তবে যেকোনো সময় এটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এজন্য সমাজের ধর্মগুরুদের এগিয়ে আসতে হবে। ধর্মগুরুদের মূল্যবান কথা আমাদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেন তবে জঙ্গিবাদ শব্দটিই একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একইসঙ্গে তাদেরকে উগ্রবাদী মন্তব্য এড়িয়ে চলারও অনুরোধ করব।’
অভিনেতা সিয়াম বলেন, ‘যারা মাদক এবং জঙ্গিবাদে জড়ায়, তারা আমাদেরই বন্ধু। একটা বন্ধু তখনই এসবে জড়ায়, যখন সে একাকিত্ব বোধ করে। তাই এসব থেকে দূরে থাকতে ভালো একজন বন্ধুর অবশ্যই প্রয়োজন আছে।’

নৃপেন চৌধুরী এসেছিলেন হাফ ম্যারাথনে সংহতি জানাতে। ১০ কিলোমিটার দৌড়ের পুরুষ জ্যেষ্ঠ ক্যাটাগরিতে তিনি প্রথম হয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি অবসরপ্রাপ্ত একজন ব্যাংকার। দেশের যেখানেই এ ধরনের প্রতিযোগিতা হয়, আমি সেখানেই যাই। আমি বিশ^াস করি, একজন দৌড়বিদ সবসময় স্বাস্থ্য সচেতন। যিনি স্বাস্থ্য সচেতন তিনি কখনও মাদক স্পর্শ করেন না।’

এই ক্যাটাগরিতে তৃতীয় স্থান অধিকারী প্রাক্তন শিক্ষক শচীন্দ্র চন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘মাদক মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরুপ। যিনি মাদক থেকে দূরে, তিনি পরিবেশ ও সমাজ সম্পর্কেও সচেতন। পরিবেশ ও সমাজের জন্য মাদক যেমন ক্ষতিকর, তেমনি সন্ত্রাসবাদও। আমি মনে করি দৌড়বিদরা এসবকে কখনও সমর্থন এবং প্রশ্রয় দেন না।’ এই ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় হয়েছেন মো. আব্দুল মতিন।  

নাট্যকর্মী রজত কান্তি গুপ্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমেদ। এ সময় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান এনডিসি, জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।      

প্রতিযোগিতাটি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। হাফ ম্যারাথনের প্রতিযোগীরা দৌড়ান ২১.১ কিলোমিটার। এতে নারী ও পুরুষ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এছাড়া ১০ কিলোমিটার প্রতিযোগিতা ছিল ৪ ভাগে বিভক্ত। নারী পুরুষের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নারী ও পুরুষ ক্যাটাগরি ছিল আলাদা।

হাফ ম্যারাথনের পুরুষ ক্যাটাগরিতে প্রথম হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল আমিন। যিনি সিলেটের প্রথম ম্যারাথনেও প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন মো. সাদিক মিয়া এবং তৃতীয় হয়েছেন মো. সাজ্জাদ হোসেন। হাফ ম্যারাথন নারী ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন সারওয়াত পারভীন, দ্বিতীয় হয়েছেন হামিদা আক্তার জেবা এবং তৃতীয় মৌসুমী আখতার।

দশ কিলোমিটার দৌড়ে পুরুষ বিভাগে মাহফুজ শাওন প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় হয়েছেন সাব্বির ভূঁইয়া এবং ডা. সাবিন তৃতীয় হয়েছেন। এই ক্যাটাগরিতে নারী বিভাগে প্রথম হয়েছেন সিলেটের নাসরিন বেগম। এছাড়া সভি সূত্রধর দ্বিতীয় এবং আফসানা হালিমা তৃতীয় হয়েছেন। ১০ কিলোমিটার জ্যেষ্ঠ নারীদের ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন হাসিনা আক্তার, দ্বিতীয় মিতা কর এবং রিনা রানী কর্মকার তৃতীয় হয়েছেন।

আরসি-০২