স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা, লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্ত রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক


মার্চ ২৩, ২০২১
০৮:০১ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৩, ২০২১
০৮:০১ অপরাহ্ন



স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা, লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্ত রোগী
#সিলেটে ছড়াচ্ছে যুক্তরাজ্যের করোনার নতুন ধরন #সভা-সমাবেশ, মেলা, সামাজিক অনুষ্ঠান চলছেই

যুক্তরাজ্যের করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত ধরন (ইউকে ভেরিয়েন্ট) ছড়াচ্ছে সিলেটেও। এ কারণেই সিলেটে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সোমবার সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৭৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। যা সংখ্যার দিক দিয়ে এ বছরের সর্বোচ্চ। 

সংক্রমণ দ্রুত বাড়লেও সিলেটে বন্ধ হচ্ছে না সামাজিক অনুষ্ঠান, মেলা, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সভা-সমাবেশ। এসব অনুষ্ঠানে ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেও শনাক্তের হার বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

সিলেটে গত বছরের ৫ এপ্রিল প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। এরপর মে-জুন মাসে দ্রুত সংক্রমণ বাড়তে থাকে। আগস্টের পর কমতে থাকে শনাক্তের হার। গত ৭ ফেব্রুয়ারি একদিনে সিলেটে মাত্র ১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর পুনরায় বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত রবিবার সিলেটে ৭৪ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। 

সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সিলেটে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি পরীক্ষাগারগুলোতেও চাপ বাড়ছে। সিলেটের চারটি করোনা পরীক্ষাগারে গত রবিবার পরীক্ষা করা হয় ৭৭৩ জনের নমুনা। সোমবার সকাল পর্যন্ত মার্চ মাসে শনাক্ত হয়েছেন ৪৫১ জন। যা পুরো ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিগুণ। ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয়েছিলেন ২৯২ জন। 

তিনটি কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যে পরিবর্তিত ধরন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ সময়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে উষ্ণ আবহাওয়া। স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করে অবাধ চলাফেরাও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ভূমিকা রাখছে। 

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘বিদেশযাত্রীদের মাধ্যমে ইউকে, স্প্যানিশসহ বিভিন্ন দেশের করোনার নতুন ধরন আমাদের এখানে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই ইউকের স্ট্রেইনে (ধরন) আক্রান্ত হচ্ছেন।’ গতবছর যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অ্যান্টিবডি এখন আর কাজ করছে না বলে মনে করেন হিমাংশু লাল রায়। এটিও সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার বিপদের বিষয়টি তুলে ধরে হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘সিলেটে এখনও প্রায় সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। মেলা, সভা-সমাবেশ, বিয়ে সবই চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মোটেই মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যকর্মী ও গণমাধ্যম কর্মীরা ছাড়া আর তেমন কাওকেই মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায় না। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।’

আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেছেন, ‘দেশে শীতকালে সর্দি-কাশির মতো অন্যান্য ভাইরাস সক্রিয় থাকে। এসব ভাইরাসের কারণে করোনা সেভাবে সংক্রমিত করতে পারেনি। সেজন্য হয়তো শীতকালে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল। এখন শীতকালের সব ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। সে কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।’ স্বাস্থ্যবিধি না মানার ঝুঁকির বিষয়টি মনে করিয়ে দেন তিনিও। আনিসুর রহমান বলেন, ‘কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এভাবে আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি।’ 

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় চট্টগ্রামে উন্মুক্ত স্থানগুলোতে সভা-সমাবেশ, ওরশ, মিলাদ মাহফিল, মহোৎসব ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু সিলেটে এখনও সবকিছু চলছে স্বাভাবিকভাবে। সিলেটে মেলা, সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান সব চলছে। এসব অনুষ্ঠানে যথারীতি লোকজন ভিড় করছেন। সামাজিক দূরত্ব যেমন মানা হচ্ছে না, তেমনি বেশিরভাগই মানুষই মাস্ক পরছেন না। 

টিভি গেইট এলাকায় সদর উপজেলা খেলার মাঠে চলছে নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ও পণ্য প্রদর্শনী। গতকাল সোমবার মেলায় গিয়ে দেখা যায়, সবাই মুখে মাস্ক নিয়ে মেলায় প্রবেশ করছেন। প্রবেশের পরই মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে রাখছেন। এ বিষয়ে মেলার স্বেচ্ছাসেবক উত্তম দাস সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরানোর চেষ্টা করছি।’

নগরের শপিং মল ও বাজারগুলোরও একই অবস্থা। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে নগরের আম্বরখানা এলাকায় পথচারী মাসুদ হোসেন বলেন, ‘মাস্ক পকেটেই আছে, কিন্তু গরমের কারণে পরছি না।’ নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় পরিবারসহ শপিং করতে আসা রুহুল মিয়া বলেন, ‘মাস্ক পরে থাকাটা অস্বস্তিকর। তাই বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে পারছি না।’ 

সিলেটে জনসমাগম হয় এমন কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (কোভিড-১৯ মিডিয়া সেল) শাম্মা লাবিবা অর্ণব সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিলেট সভা-সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কোনো অনুমতি জেলা প্রশাসন দিচ্ছে না। কারণ কেন্দ্রীয়ভাবে এসবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও কেউ করলে এর দায় আয়োজকদের। এছাড়া বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হয় এ জন্য কমিউনিটি সেন্টারগুলো খুলে দেওয়ার আগে আমরা কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। তারা সেসব নির্দেশনা মেনে করে অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন।’

মানুষকে সচেতন করতে নিয়মিত অভিযান চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’ 

এনএইচ/আরসি-১৩