জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া
জুন ১৪, ২০২১
০৯:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ১৪, ২০২১
০৯:৪৪ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের উত্তর চুনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের ভবন এমনিতেই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। করোনায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ২০১৬ সালের ভূমিকম্পে মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভবনটি নিয়ে এখন দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ওই সময় এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ শিক্ষা বিভাগ ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কিন্তু আজও মিলেনি নতুন ভবন তৈরি বা পুরোনো ভবন মেরামতের জন্য কোনো বরাদ্দ।
করোনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণায় আরও ক্ষতি হয়েছে ভবনটির। গত ৫ বছর থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছিল বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এমতাবস্থায় করোনাকাল পরে খোলা হলে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
সরেজমিনে উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের উত্তর চুনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক দেবী প্রসাদ ভট্টাচার্য্য জানান, ১৯৮০ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন পাঠদানের জন্য। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৪ সালে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ৪ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মিত হয়। কিন্তু ওই সময় ঠিকাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ভবনটির কাজ নিম্নমানের হওয়ার কারণে তাতে ফাটল দেখা দেয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ভূমিকম্পে বিদ্যালয় ভবনটিতে একাধিক ফাটল দেখা দেয়। খসে পড়ে পলেস্তারা। কুলাউড়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল রাকিব ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক মখলুফা, নাজমিন বেগম, ইয়াছমিন বেগম, লাকী রানী চন্দ, হাসি রানী চন্দ, সুমিত্রা রানী, মঞ্জু রানী নাথ, কল্পনা রানী, সাজনা বেগম, রায়না বেগম, লেচু বেগম, অর্পণা রানী ও সানজিদা আক্তার জানান, শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন তারা- যদি পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে পড়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে! যদি পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাথায়! এছাড়া নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা আশপাশের মানুষের বাড়িতে গিয়ে সারতে হয় প্রাকৃতিক কাজ।
করোনার কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই ভবনে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করতে হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, করোনার এই বন্ধকালীন সময়ের মধ্যে একটি ভবন নির্মিত হলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে। নয়তো বিদ্যালয়টি পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা ও অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য বীরেন্দ্র দাস জানান, বার বার শিক্ষা বিভাগ এবং সাংসদের কাছে একটি ভবনের দাবি জানালেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতির কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীও কমছে। একটি ভবনের দাবি ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক সবার।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান জানান, শিক্ষা অধিদপ্তরের তালিকা এবং স্থানীয় সাংসদের চাহিদার তালিকায় এক নম্বরে চুনঘর স্কুলের নাম বার বার দেওয়া হচ্ছে। এর পরে চাহিদা দেওয়া বিদ্যালয়গুলোতে ভবন নির্মাণ হলেও রহস্যময় কারণে এই বিদ্যালয়টি উপক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
জেএইচ/আরআর-০১