মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তাদের

শামীম আহমদ, বালাগঞ্জ


জুন ২৬, ২০২১
০২:৫৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ২৬, ২০২১
০২:৫৭ পূর্বাহ্ন



মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তাদের

ভিক্ষুক সহোদর রুসন মিয়ার পরিবারের সদস্য ৭ জন আর নূরুল ইসলামের ৫ জন। নদীভাঙনের শিকার হয়ে ১ বছর যাবৎ তারা মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হচ্ছে না। অন্যের বাড়িতে এভাবে আর কতদিনই বা থাকা যায়? তাদের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের হামছাপুর গ্রামে। নূরুল ও রুসনের মত আরও প্রায় ১০-১২টি পরিবারের বসতবাড়ি গিলে খেয়েছে কুশিয়ারা। বিগত দিনে নদীর ভাঙনে এ গ্রামের অসংখ্য পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বর্তমানে ভাঙণের আতঙ্কে রয়েছে আরও কয়েকটি পরিবার।

স্থানীয়দের তথ্যমতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ১ বছরে নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো হামছাপুর গ্রামের আব্দুস শহিদ, শাহ আলম, আব্দুল ওয়াহিদ, রুসন মিয়া, নূরুল ইসলাম, শাহজাহান মিয়া, খসরু মিয়া, আব্দুর রব, সাবুল মিয়া ও রুমন মিয়াকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভূমিহীন সনদ দেওয়া হয়। ওই সনদ হাতে পেয়ে ভূমিহীন হিসেবে সরকারি ভূমি বরাদ্দ চেয়ে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। কিন্তু মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনরা সরকারি ঘর পেলেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকায় ওঠেনি তাদের নাম।

ভূমিহীন পরিবারগুলো বিভিন্নজনের বাড়িতে বসবাস করে। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে প্রায় ৪ মাস আগে হতদরিদ্র দিনমজুর আব্দুস শহিদ, শাহ আলম, আব্দুল ওয়াহিদ, ভিক্ষুক সহোদর রুসন মিয়া ও নূরুল ইসলামের পরিবার হামছাপুর গ্রামের পশ্চিমদিকে হালুয়া নামক খালের নিকট সরকারি ১ নম্বর খতিয়ানের ভূমিতে কোনোরকমে ঘর তুলে সেখানে আশ্রয় নেয়। আর ভূমিহীন খসরু মিয়া, শাহজাহান মিয়াসহ অন্যদের ঘর তৈরির সামর্থ না থাকায় এখনও তারা অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন।

এদিকে সরকারি ভূমিতে আশ্রয় নিলেও তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে ভূমিহীনদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, হামছাপুর গ্রামের প্রভাবশালী মেন্দি মিয়া তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন। এমনকি মেন্দির লোকজন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি ও মামলা-হামলার ভয় দেখাচ্ছেন। সরকারি লোকজন তাদেরকে সেখান থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মেন্দি মিয়া কেন ভূমিহীনদের সরকারি ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে চান আর এতে তার কি লাভ এ বিষয়ে জানতে চাইলে হামছাপুর গ্রামের জিতু মিয়া ও আবির মিয়া বলেন, ভূমিহীনরা যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে সরকরি খাল ভরাট করাসহ খালের আশপাশের বেশ কিছু সরকারি ভূমি মেন্দি মিয়া অবৈধভাবে ভোগ-দখল করে ফসল ফলাচ্ছেন, ফিশারি দিয়েছেন। খালটি এখন নিশ্চিহ্ন। এ নিয়ে নিয়ে বিগত দিনে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট একাধিকবার লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। এখন ভূমিহীনদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে থাকা ১ একর সরকারি ভূমি সে দখল করতে চায়।

গ্রামের বাসিন্দা কাদির মিয়া বলেন, মেন্দি মিয়া তার বাবার মতো স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনের আদর্শ লালন করেন। ভূমিহীনরা স্বাধীনতার পক্ষের সংগঠনের সমর্থক হওয়ায় তার গা জ্বলে। এই প্রতিহিংসায় ভূমিহীনদের তাড়িয়ে দিয়ে মেন্দি মিয়া সরকারি ভূমি দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।

কেন ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে চান এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেন্দি মিয়া তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, এলাকার স্বার্থে অভিযোগ দিয়েছি। ওরা প্রকৃত ভূমিহীন নয়। ভূমিহীন দাবি করা একজনের পিতা এই ভূমি লিজ এনেছিল। এ নিয়ে মামলা হলে লিজ বাতিলও হয়। ৪০টি পরিবার এই ভূমিতে মসজিদ করার জন্য ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন দিয়েছে।

এ ব্যাপারে পৈলনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদের তথ্যানুযায়ী আমরা যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে ভূমিহীনের সনদ দিয়েছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকায়ও তাদের নাম দেওয়া হয়েছে।

মেন্দি মিয়ার দেওয়া অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা অনিল সিংহ। তিনি বলেন, সরকারি ভূমিতে যারা ঘর তুলেছেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে আমি তাদেরকে নিজ দায়িত্বে ঘর ভেঙে চলে যাওয়ার কথা বলে এসেছি।

এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার বলেন, আমি তাদের (ভূমিহীনদের) সঙ্গে কথা বলতে চাই। তাদেরকে বলবেন আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য।


এসএ/আরআর-০৯