প্রচারে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, সংক্রমণ শঙ্কায় ভোটাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ২৮, ২০২১
০৫:৫০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ২৮, ২০২১
০৫:৫০ পূর্বাহ্ন



প্রচারে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, সংক্রমণ শঙ্কায় ভোটাররা

করোনার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায় থাকা সিলেটে (সিলেট-৩) আগামী ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপনির্বাচন। এ অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যেই প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রচারে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থাকায় করোনার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কায় পড়েছেন ভোটাররা। 

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গত ১১ মার্চ সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস মারা যান। এরপর নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই আসন শূন্য ঘোষণা করে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ এর দফা (৪) অনুযায়ী, শূন্য আসনে ৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও করোনার কারণে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় শূন্য আসনটিতে ৮ জুনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশে তফসিল ঘোষণা করে ইসি। আগামী ২৮ জুলাই এই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। 

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট-৩ আসনে ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৯ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৮ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯১ জন নারী। তফসিল ঘোষণার পরই প্রচারে মাঠে নামেন এই আসনের মনোয়ন প্রত্যাশীরা। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন চারজন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা প্রতীকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক লাঙ্গল প্রতীকে, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া ডাব প্রতীকে এবং সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী মোটরগাড়ি প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। 

অপরদিকে, সিলেটে করোনার সংক্রমণ বেড়েইে চলেছে। গত চারদিনে জেলায় ৩৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন শনাক্তের হার ইতোমধ্যে ১৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে; যে হারকে আশঙ্কাজনক বলছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায়ও রয়েছে সিলেট জেলার নাম। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

কিন্তু এই অবস্থার মধ্যেও প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন সিলেট-৩ আসনের প্রার্থীরা। প্রতীক পাওয়ার আগে থেকে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করলেও প্রতীক পাওয়ার পর প্রচারে অনেক গতি এসেছে। কেউ কর্মিসভা করছেন, কেউ করছেন গণসংযোগ। তাদের কর্মী সমর্থকরাও নিজ নিজ প্রার্থীর সমর্থনে সভা-সমাবেশ করছেন। এসব গণসংযোগ, সভা-সমাবেশে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক ব্যবহারে অনীহা রয়েছে সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের। শুধু কর্মী-সমর্থকরাই নন, প্রার্থীরাও অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করছেন। 

যদিও প্রার্থীরা বলছেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রচারকাজ চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব সিলেট মিররকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমাদের প্রচারণা চলছে। এছাড়া লকডাউন হলে সরকারের নির্দেশনা মেনে সব প্রচারণা বন্ধ রাখা হবে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘মহামারিতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। আমার সব প্রচারণায় নিজে মাস্ক পরি, কর্মী-সমর্থকদেরও মাস্ক পরতে বলছি। তবু অনেক সময় কর্মী-সমর্থকরা মাস্ক ছাড়াই চলে আসেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাদের মাস্ক দিচ্ছি।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। 

প্রার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করলেও ভোটাররা বলছেন নির্বাচনী প্রচারে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে। খোদ প্রার্থীরাই অনেক সময় মাস্ক না পরেই সভা-সমাবেশ করছেন। তাদের কর্মী-সমর্থকরা শারীরিক দূরত্ব না মেনে, মাস্ক না পরেই প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। অনেক প্রার্থী আবার হাট-বাজারে গিয়ে হাত মেলাচ্ছেন ভোটারদের সঙ্গে। এর ফলে ভোটারদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। 

দক্ষিণ সুরমার জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের কাওছার চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘অনেকেই এলাকায় গণসংযোগ করতে আসেন। প্রার্থীদের পক্ষে তাদের সমর্থকরাও সভা করছেন। কিন্তু এসব সভা-সমাবেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। অনেক সময় প্রার্থীরাও মাস্ক ছাড়া এসব সভা-সমাবেশ, গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। এমনিতেই মানুষজন কম সতর্ক, এরমধ্যে এভাবে প্রচার-প্রচারণা চললে আমাদের জন্য খারাপ ছাড়া ভালো কিছু হবে না।’

বালাগঞ্জের শহিদ চৌধুরী বলেন, ‘যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা আগামী দিনে আমাদের প্রতিনিধি হবেন। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও বেশি। কিন্তু করোনার এই উর্ধ্বগতিতে তারা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তা আমাদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ইসরাইল হোসেন সিলেট মিররকে বলেন, ‘আগামী ৬ জুলাই থেকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। এর আগেই আজ সোমবার থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে প্রার্থীরা কোনোভাবেই প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না। আর লকডাউন বাড়লে কমিশন নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

এনএইচ/আরসি-০২