গোলাপগঞ্জে এগিয়ে চলেছে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাজ

ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ


জুন ২৮, ২০২১
০৮:৫৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৮, ২০২১
০৮:৫৩ অপরাহ্ন



গোলাপগঞ্জে এগিয়ে চলেছে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাজ

সিলেটের গোলাপগঞ্জে সরকারি অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন ৩টি গম্বুজ ও একটি বিশাল মিনার সম্বলিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ২২ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপিত হতে যাওয়ায় উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সন্তোষ ও শুকরিয়া আদায় করেছেন।

জানা যায়, দেশের ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর অংশ হিসেবে গোলাপগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের বর্তমান মসজিদের স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১২ কোটি ৫৪ লাখ ২৫ হাজার ২৪৫ টাকা ব্যয়ে ৩ তলা বিশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটির ২২ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রতিদিন শ্রমিকরা কাজ করে যাচ্ছেন। একটু একটু করে মসজিদের অবয়ব প্রকাশিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেইসমেন্ট শেষ করে প্রথম তলার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম তলার পিলার, মাটি ভরাট ও কলামের কাজ শেষ হয়েছে। সম্মুখভাগের প্রধান প্রবেশপথের সিঁড়ির কাজ শেষ হওয়ায় মসজিদের অবয়ব অনেকটা বোঝা যাচ্ছে।   

নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোলাপগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি ৪০ শতাংশ জমির উপরে নির্মিত হচ্ছে। উপজেলা মডেল মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মডেল মসজিদে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা ছাড়াও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে থাকবে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক অজুর স্থান, লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র, কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজ যাত্রীদের নিবন্ধন কেন্দ্র ও ইমামদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও থাকবে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিস।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, মসজিদ নির্মাণে প্রতিদিন ১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। রড কাটা, বাঁধা, সিমেন্ট, বালি ও পাথরের সংমিশ্রণ তৈরি আর পিলার ঢালাই চলছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার এসবের তদারকি করছেন। 

ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল আজাদ বলেন, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ধারণা বাংলাদেশে প্রথম। নামাজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও ইসলামিক শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রে হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মিত হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ৫০টি মসজিদের উদ্বোধন করেছেন। কোনো সরকার অতীতে এমন উদ্যোগ নেয়নি।

উপজেলা মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আব্দুল মতিন বলেন, সারা দেশে সরকার মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছেন, এটা সরকারের সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেরিনা কনস্ট্রাকশন এসোসিয়েট লিমিটেড অ্যান্ড আর কে বিল্ডাস অ্যান্ড ইন্জিনিয়ার্সের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. আশরাফুল ইসলাম  বলেন, মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ প্রায় ২২ ভাগ শেষ হয়েছে। দেড় বছরের ভেতরে কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছি। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ বলেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাটা যেন মানুষ পায় এবং ইসলামী সংস্কৃতিটা মানুষ যেন ভালোভাবে রপ্ত করতে পারে, চর্চা করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করতে এই উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, সারা দেশের ন্যায় গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১২ কোটি ৫৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। মডেল মসজিদগুলো শুধু নামাজ পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখানে ইসলামী সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন ও গবেষণাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে। 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সুদূরপ্রসারী মৌলিক সিদ্ধান্ত ও মহতী উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এত বড় প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ধর্মের নামে অনেক লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার করে। মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হলে মানুষ সঠিক ইসলামী শিক্ষা পাবে এবং এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবে না।


এফএম/আরআর-০২