ঈদের আনন্দ বঞ্চিত তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


জুলাই ২০, ২০২১
০৫:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২০, ২০২১
০৫:১৬ অপরাহ্ন



ঈদের আনন্দ বঞ্চিত তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী

এবারও ঈদ আনন্দ বঞ্চিত ওসমানীনগরের তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। দীর্ঘ ১৬ মাস বন্ধ থাকা উপজেলার ২৯টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঈদের আনন্দ তাদের কাছে অনেকটা ফ্যাকাশে। অসহায় হয়ে তারা আর্থিক সহায়তার জন্য প্রশাসনে আবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। 

উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বেতন ও টিউশন ফি দিয়েই চলে শিক্ষক-কর্মচারীদের সংসারসহ সবকিছু। কিন্তু করোনায় গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে সকল কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ থাকায় কোনো বেতন নেই শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বন্ধ থাকায় শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাসিক বেতনও বন্ধ। এছাড়া করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধিতে শিক্ষকের টিউশনি করারও সুযোগ নেই। এ অবস্থায় অনেকে পেশাগত সম্মান ভুলে নানা উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বৃদ্ধ বাবা-মা আর দুই বোন নিয়ে রাহেলা বেগম (ছদ্মনাম) একটি ভাড়া বাসায় থেকে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। করোনা সংকটে চাকরি ও টিউশন হারিয়ে তিনি এখন দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। ২/৩ দিনে একটি কাঁথা সেলাই করে পান ৩ থেকে ৪শ টাকা। মাস শেষে বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যা থাকে, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর যোগাড়। গত কয়েকটা ঈদের মতো এবারের ঈদটাও আনন্দহীনভাবেই কাটবে বলে মনে করছেন তিনি।

দুই সন্তানের জননী শিউলি বেগম (ছদ্মনাম) একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়িয়ে ও কয়েকটি টিউশনি দিয়ে স্বামীহীন সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সবকিছু বন্ধ থাকায় সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে তিনি সুপারি কেটে লোক পাঠিয়ে বিভিন্ন পানের দোকানে বিক্রি করছেন। কেমন কাটবে ঈদ সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করোনার কারণে দুইবেলা ভাত খেতে পারাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদ করব কী করে, আর কিভাবে বাচ্চাদের বায়না সামলাব বুঝতে পারছি না।

শিউলি-রাহেলাদের মতো উপজেলার অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীর গল্প এখন প্রায় একইরকম। আর্থিক সংকটে তাদের চোখ-মুখে উদ্বেগ আর হতাশার বলিরেখা। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় থাকায় তারা কারও কাছে নিজের দৈন্যদশার কথা প্রকাশ করতে পারছেন না। অর্থকষ্টে থাকা শিক্ষকদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার জন্য প্রশাসন বরাবরে আবেদন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ওসমানীনগর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

উপজেলার গোয়ালাবাজারের উদয়ন কিন্ডারগার্টেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আমজদ চৌধুরী সিজু বলেন, আর্থিক সংকটে পড়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষক ও কর্মচারীদের ব্যাপারে মানবিক। কিন্তু টিউশন ফি বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপার্জন বন্ধ। আর তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত ৩টি ঈদের মতো এবারও তাদের মনে ঈদের আনন্দ নেই।

ওসমানীনগর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, শিক্ষক ছাড়া আরও অর্ধশত কর্মচারী এসব স্কুলে নিয়োজিত আছেন। বর্তমান মহামারিতে কেউই তাদের আর্থিক অবস্থার খোঁজ রাখছেন না। অন্যদিকে ওসমানীনগরের বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেন পরিচালিত হচ্ছে ভাড়া করা ভবনে। ফলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ভবনের ভাড়া নিয়মিত দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক কারণে ইতোমধ্যে ওসমানীনগরের একটি কিন্ডারগার্টেন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

তিনি বলেন, শিক্ষক/কর্মচারীদের অবস্থা বিবেচনা করে তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ওসমানীনগর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চলতি বছরের মার্চে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত তাদের কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, করোনাকালে বিভিন্ন পেশার লোকজন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা প্রশাসন থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বেশ কয়েকমাস থেকে। তাদের জন্য কী করা যায় সে বিষয়টিও আমাদের নজরে রয়েছে।

ইউডি/আরআর-০১