বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
আগস্ট ০১, ২০২১
১০:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ০১, ২০২১
১০:৪৭ অপরাহ্ন
কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ‘লাইভ সম্প্রচার’ বিড়ম্বনায় অতিষ্ট সিলেটের বিয়ানীবাজারের প্রশাসন। যখন বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়, তখন মোবাইলের ক্যামেরা অন করে জটলা বাঁধিয়ে প্রশাসনের পিছু নেন এই লাইভ সম্প্রচারকারী। এতে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন দায়িত্বশীল অভিযানকারীরা। লাইভ সম্প্রচারকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকায় অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে।
জানা যায়, চলমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বিয়ানীবাজারে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের করা হচ্ছে জরিমানা, দেওয়া হচ্ছে শাস্তি। তবে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে নামলে খবরটি চারদিকে চাউর হয়। স্থানীয় বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচার শুরু করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও নিজ উদ্যোগে সম্প্রচার শুরু করে দেন।
বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি সজীব ভট্টাচার্য জানান, শুধু বিয়ানীবাজার নয়, সারা দেশেই লাইভ সম্প্রচারকারীদের দৌরাত্ম বেড়েছে। স্থানীয়ভাবে এদের সংখ্যা বেশি। বিয়ানীবাজার উপজেলায় লাইভ সম্প্রচারকারী অনলাইন পেজের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে। তাদের কারও নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে না পারায় তারা আবেদন করেনি।
জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসন পৌরশহরের উত্তর বাজারে অভিযান শুরু করলে দক্ষিণ বাজার জনশূন্য হয়ে পড়ে। আবার দক্ষিণ বাজার থেকে অভিযান আরম্ভ হলে শহরের অন্যান্য এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসন কোথাও উপস্থিত হলেই লাইভ সম্প্রচারকারীরা ভিড় জমান। এতে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
বিয়ানীবাজারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, লাইভ সম্প্রচারকারীদের কারণে প্রশাসনের অনেক গোপনীয়তা রক্ষা পায় না। তাছাড়া যারা লাইভে কথা বলেন, তারাও শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারেন না। এতে প্রকৃত গণমাধ্যকর্মীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, এভাবে অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রচার চলতে থাকলে আমাদের জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিয়ানীবাজার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুশফিকুন নূর জানান, ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালে অনেকে মোবাইলের ক্যামেরা অন করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সম্প্রচার শুরু করেন। এতে আদালতের সঙ্গে ওই ব্যক্তির কী কথা হচ্ছে, তাও তারা সবাইকে জানিয়ে দেন, যা বেআইনি। অভিযানকালে কখনও ৫০-৬০ জন লাইভ সম্প্রচারকারী আমাদের পিছু নেন। এতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
সিলেট জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আবুল কাশেম জানান, লাইভ সম্প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এরা মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও সম্প্রচার করা শুরু করে, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তিনি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক নূর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ ২৩ দফা বিষয়ে লোকজনকে অবহিত করেছেন। পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গত সোমবার পৌরশহরে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকযোগে প্রচার চালানো হয়।
অপরদিকে, বিয়ানীবাজারে ম্যাজিস্ট্রেট যতক্ষণ অভিযানে মাঠে থাকেন, ততক্ষণ মানুষ সতর্কভাবে চলাফেরা করলেও অভিযান শেষে কিছু মানুষকে কোনো প্রয়োজন ছাড়া অযথা ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাছাড়া চলমান লকডাউনে এখন পর্যন্ত গ্রামীণ এলাকা ও হাট-বাজারে কোনো অভিযান চালাননি ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফলে সেসব এলাকায় জনসমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৌরশহরসহ উপজেলার সর্বত্র দেদারছে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত যানবাহন।
এসএ/আরআর-০৩