সিলেটে নির্ধারিত সময়ের পরেও চলাচল করেছে বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ০২, ২০২১
০৬:২৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০২, ২০২১
০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন



সিলেটে নির্ধারিত সময়ের পরেও চলাচল করেছে বাস

টানা ১২ দিন পর খুলেছে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা। ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়িতে আসা শ্রমিকদেরও তাই নিজ কর্মস্থলে ফেরার স্রোত নেমেছে। শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও সারাদেশে শনিবার রাত ১২টা থেকে গতকাল রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তবে সিলেটে নির্ধারিত সময়ের পরেও কাউন্টার থেকে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় তো ছিলই। এছাড়া মাত্র ১২ ঘণ্টার জন্য চালু হওয়ায় বেশিরভাগ বাসই রাস্তায় নামানো হয়নি।

বাড়তি ভাড়া আদায় করলেও যাত্রীরা গাড়িতে করে ঢাকা ফিরতে পেরেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। যদিও সময়মতো বাস কাউন্টারে পৌঁছাতে না পারায় যাত্রীদের ঢাকায় ফিরতে হয়েছে বিকল্প বাহনে।

সিলেটের পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা ইসমাঈল হোসেন কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় ইউনিট ইনচার্জ হিসেবে। ঈদের ছুটি কাটাতে সিলেটে এসেছিলেন। বিধিনিষেধে সবধরনের কারখানা ও যান চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরতে পারেননি। রবিবার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ায় ফেরার পথ ধরতে হয় তাকে। তিনি আল-মোবারাকা বাসের টিকেট কাটেন ৭০০ টাকা দিয়ে।

তবুও ফেরার বাহন পেয়ে খুশি জানিয়ে তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) থেকে গার্মেন্টস খোলা। কাল যেভাবেই হোক যথাসময়ে অফিসে পৌঁছতে হবে। তাই বেশি ভাড়া নিলেও ফিরতে পারছি, এটাই সবচেয়ে বড় স্বস্তির।’ বাস চলাচলের সময় আরও একটু বাড়ালে যাত্রীদের যাতায়াতে সুবিধা হতো বলে তিনি মনে করেন।

মামুন পরিবহনে ফিরেছেন সুশেন নাথ। আত্মীয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ঈদের পরদিন সিলেট এসেছিলেন। কিন্তু বিধিনিষেধ বেড়ে যাওয়ায় তিনি আর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে ফিরেননি। তবে সেখানে ফেরার জন্য ভাড়া গুণতে হয়েছে ২০০ টাকা। এই বাসে করে যারা ঢাকায় গেছেন, তাদের গুণতে হয়েছে ৫০০ টাকা করে। বাড়তি ভাড়া দিলেও নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন এটাই তাদের কাছে স্বস্তির।

কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৬টায় সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে বাসের যাত্রা শুরু হয়। বেলা পৌণে ২টায় আল-মোবারাকার শেষ বাসটিসহ মোট ৭টি বাস সিলেট ছেড়ে যায়। এছাড়া বেলা দেড়টায় মামুন পরিবহনেরও শেষ বাসটিসহ মোট ৫টি বাস যাত্রী নিয়ে সিলেট থেকে ছেড়ে যায়।

সরকার নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এই সময়ের পর আর কোনো বাস চলাচলের কথা না থাকলেও নিয়ম ভাঙতে দেখা গেছে। বেলা দেড়টায় মামুন পরিবহন এবং পৌণে ২টায় আল-মোবারাকার শেষ বাসটি চলাচল করে। শেষ বাস দুটি আবার সোজা পথে না গিয়ে লাউয়াই এলাকার বঙ্গবীর সড়ক ব্যবহার করে চন্ডীপুলের মহাসড়কে উঠে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আল-মোবারাকা সিলেট কাউন্টারের একজন বলেন, ‘যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। তাই আমরা নির্ধারিত সময়ের পরেও একটি বাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।’ বিকল্প পথ ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে মামুন পরিবহনের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের পরে হুমায়ূন রশীদ চত্বর হয়ে গেলে পুলিশ ধরতে পারে। তাই বিকল্প পথ ব্যবহার করে যেতে হয়েছে।’

গতকাল সরেজমিন দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, কদমতলী এলাকয় অনেকগুলো বাস দাড় করিয়ে রাখতে দেখা যায়। মামুন পরিবহান ও আল-মোবারাকা ছাড়া বেশিরভাগ বাসই কাল চলাচল করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনা পরিবহনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মাঈনুদ্দীন স্বপন বলেন, ‘মাত্র ১২ ঘণ্টার জন্য বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চালক ও সুপারভাইসার সবাই ছুটিতে যার যার বাড়িতে চলে গেছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে চালক ও সুপারভাইজার পাওয়া যাবে না। তাছাড়া সিলেট থেকে ঢাকায় আসা বাসটি ফিরে যাওয়াও এই সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়। তাই আমরা বাস সার্ভিস চালু করিনি। 

বেলা ২টার পরেও অনেককে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টারে আসতে দেখা যায়। বাস না পেয়ে তাঁদেরকে ফিরতে হয়েছে বিকল্প উপায়ে। মাইক্রোবাসে (হাইয়েস) যেতে যাত্রীদের জনপ্রতি গুণতে হয়েছে দেড় হাজার টাকা করে।

আরসি-০৩