সিলেটে ভয়ংকর জুলাই

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ০৪, ২০২১
০৪:২৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২১
০৪:২৭ পূর্বাহ্ন



সিলেটে ভয়ংকর জুলাই
প্রতি ঘন্টায় আক্রান্ত ১৯, দিনে ৭ জনের মৃত্যু

করোনায় ভয়ঙ্কর জুলাই মাস কাটিয়েছেন সিলেটবাসী। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে এই মাসে। জুলাই মাসে প্রতি ঘন্টায় বিভাগে ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে আর প্রতিদিন মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। 

সিলেট বিভাগে জুলাইয়ের ৩১ দিনে ১৪ হাজার ৪৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এসময় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২২৪ জন। অর্থাৎ প্রতি ঘন্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯ দশমিক ৪৫ জনের। আর প্রতিদিন মৃত্যু হয়েছে ৭ দশমিক ২ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেট বিভাগে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সেই হিসেবে সংক্রমণের ৪৮৪ দিন চলছে সিলেটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে জুলাইয়ে। এর আগে গত বছরের জুনে একমাসে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আর এ বছরের জুনে একমাসে সর্বোচ্চ ৬৯ জনের মৃত্যু দেখেছিল সিলেট। 

এদিকে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সিলেট বিভাগে যত আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে বেশি শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে জুলাই মাসে। জানুয়ারিতে করোনা শনাক্ত হয় ৫০৯ জনের, মৃত্যু হয় ১২ জনের। ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয় ৩০৩ জনের, মৃত্যু হয় ৩ জনের। মার্চে শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৮৬ জনের আর মৃত্যু হয় ১২ জনের। এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় ৩ হাজার ২০১ জন আর মৃত্যু হয় ৬০ জনের। মে মাসে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ২ হাজার ৪ জনের আর মৃত্যু হয় ৫৯ জনের। আর জুনে ৩ হাজার ২৮৫ জনের করোনা শনাক্ত ও ৬৯ জনের মৃত্যু হয়। 

অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিভাগে ১০ হাজার ৪৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২১৫ জন। তবে জুলাইয়ে এক মাসেই বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ১৪ হাজার ৪৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এসময় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪৭ জন। 

চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এপ্রিলে বাড়ে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। মে মাসের প্রথম থেকে আবার শনাক্ত কমতে থাকলেও গত ঈদ-উল-ফিতরের পর তা বাড়তে শুরু করে। আর জুনের শেষ দিকে তা বাড়তে শুরু করে আশঙ্কাজনক হারে। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে সিলেটে করোনা ‘পিক টাইম’ চলছে। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত বাড়ায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। 

এদিকে রোগীর চাপে বেসামাল হয়ে পড়েছে সিলেটের হাসপাতালগুলো। বিভাগের চার জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে নেই আইসিইউ সুবিধা। মৌলভীবাজারে থাকলেও তা হাতে গোনা। ফলে চাপ বাড়ছে সিলেট মহানগরের হাসপাতালগুলোতে। এই অবস্থায় সিলেটের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা রোগীতে পরিপূর্ণ। রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও কোনো আইসিইউ খালি পাচ্ছেন না। আইসিইউ না পাওয়ায় মারা যাচ্ছেন অনেকেই। এদিকে বর্তমানে শুধু আইসিইউ নয় সাধারণ শয্যা পাওয়াই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শয্যা বাড়িয়েও রোগী জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।  

রোগীর চাপে সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের এক কেবিনে ৩ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাফী মাহদি। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালে সব শয্যা এখন রোগীতে পরিপূর্ণ। বর্তমানে অতিরিক্ত রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।’  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. নূরে আলম শামীম সিলেট মিররকে বলেন, ‘দেশের অন্যান্য অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ কমে এলেও এখন সিলেট ও চট্রগ্রাম অঞ্চলে বাড়ছে। তাই চলমান বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। সংক্রমণের যে উর্দ্ধগতি তার চেইন ব্রেক করতে হবে। তাহলে সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসবে। এছাড়া গণটিকা কার্যক্রম চলছে। যত বেশি মানুষ টিকার আওতায় আসবেন ততোই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।’ 

বিএ-০১