নাবিল হোসেন
আগস্ট ০৪, ২০২১
০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২১
০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
সিলেটে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। দ্রæত সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালেও চাপ বেড়েছে মারাত্মকভাবে। ইতোমধ্যে সিলেট মহানগরের হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। নতুন শয্যা বাড়িয়েও এ সংকট কাটানো যাচ্ছে না।
সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৯৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিনে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর আগে গত ১ জুলাই সিলেট বিভাগে ৯৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। যা একদিনে সর্বোচ্চ।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে বিভাগে ১০ হাজার ৪৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। কিন্তু জুলাইয়ে শনাক্ত হয় ১৪ হাজার ৪৭১ জন। আগস্টে সংক্রমণের হার আরও বেড়েছে। আর শনাক্তদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, চিকিৎসার জন্য তাদেরকে সিলেট মহানগরের হাসপাতালে আনা হচ্ছে। ফলে রোগীর চাপে সিলেট নগরের হাসপাতালগুলো এখন গভীর সংকটে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে নতুন করে শয্যা বাড়ানো হলেও শয্যা পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে খুব কম সময়ে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য সিলেটে সবচেয়ে বেশি শয্যা রয়েছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রথমে দুটি ওয়ার্ডে ১২০টি শয্যা নিয়ে এই হাসপাতালে করোনার রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। পরে রোগীর চাপ বাড়ায় ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তাতেও রোগীদের স্থান সাংকুলান হচ্ছে না। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৮টি আইসিইউসহ ৩২৫টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে সব শয্যাই রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে।
হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘রোগীর চাপ অনেক বেশি। গত শনিবার আমরা ৫৫ শয্যার আরেকটি করোনা ওয়ার্ড চালু করেছি। কিন্তু ওয়ার্ড চালু হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই এর অর্ধেক শয্যা রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। বর্তমানে ৮টি আইসিইউসহ ৩২৫টি শয্যার সবগুলোতেই রোগী ভর্তি আছেন।’
হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন সঙ্কট আপাতত নেই। তবে ভয়ের জায়গা হচ্ছে অনেক বেশি অক্সিজেন লাগছে। ফলে মজুত দ্রুত কমে যাচ্ছে। অক্সিজেন সরবরাহে বিলম্ব বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।’
করোনার রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাফী মাহদি সিলেট মিররকে জানান, এখানেও এখন শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছেন। ফলে একেকটি কেবিনে তিনজন করে রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় শয্যা না পেয়ে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন রোগী হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ফিরে যাচ্ছেন।
শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোও রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) এবিএম জরজেছুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে প্রথমে করোনার রোগীদের জন্য ৩২টি শয্যা ছিল। পরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তাতেও রোগীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। করোনার রোগীদের জন্য বর্তমানে ৯টি আইসিইউসহ ৭০টি শয্যা রাখা হয়েছে। সব শয্যায় পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না।’
একই অবস্থা নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও। হাসপাতালে প্রথমে করোনা রোগীদের জন্য ৬০টি শয্যা ছিল। যার মধ্যে ১২টি ছিল আইসিইউ শয্যা। এরপর আরও ১৬টি শয্যা যুক্ত করা হয়। বর্তমানে ৩২টি আইসিইউ শয্যাসহ ৯৫টি শয্যা রয়েছে। সব শয্যাই রোগীতে পরিপূর্ণ।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. নাজমুল হক সিলেট মিররকে বলেন, ‘বাধ্য হয়েই শয্যা বাড়াতে হচ্ছে। কারণ রোগীরা আসছেন। আমাদের কিছু করার থাকছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষে এর বেশি রোগী ভর্তি করা সম্ভব নয়। কারণ অক্সিজেন সঙ্কট রয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়াও সিলিন্ডার দিয়েও রোগীদের অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছি আমরা। সংক্রমণ কমাতে না পারলে হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়েও রোগীর জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই চলমান বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষকে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারলেই আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে। মনে হচ্ছে সিলেটে পিক টাইম চলছে। দুই সপ্তাহ পর কমে যেতে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভাগে ৪২২ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৯৯ জন, সুনামগঞ্জে ৬৪ জন, হবিগঞ্জে ৩৮ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২১ জন। তবে সিলেটের হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালগুলোতে এই হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘সকালে পাঠানো তথ্যে কিছু ত্রæটি রয়েছে। আমরা সিলেটের সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট জেলার হাসপাতালে ৪০৫ জন রোগী ভর্তি আছেন।’
অক্সিজেন সঙ্কটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন সঙ্কট নেই। তবে স্বল্পতা রয়েছে। স্বল্পতা রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’
এনএইচ/বিএ-০২