বালাগঞ্জে কিশোর হত্যা : ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামিরা

বালাগঞ্জ প্রতিনিধি


আগস্ট ০৫, ২০২১
০৮:১৪ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৫, ২০২১
০৮:১৪ অপরাহ্ন



বালাগঞ্জে কিশোর হত্যা : ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামিরা

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের হামছাপুর গ্রামের কিশোর কামরুল হাসান (১৭) হত্যা মামলায় অভিযুক্তরা গত ৫ দিন ধরে পলাতক রয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রতিপক্ষের হামলায় কামরুল নিহত হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ীর ভাষ্যমতে, ঘটনার পর রাতে হামলাকারীরা হাসপাতাল এলাকায় যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে খেয়াঘাটের নিকট অবস্থান করছিল তারা। তখন তারা দম্ভোক্তি করে বলছিল, 'বেশি বাড়াবাড়ি করায় তাকে চিরতরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলাম।' তাদের এ ধরনের কথা শোনে আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হয়। এ সময় তাদেরকে আটকানোর চেষ্টা করলে দ্রুত নৌকায় উঠে তারা কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা সীমান্তে চলে যায়।

এদিকে, কামরুল নিহতের ঘটনায় তার বড়ভাই এমরান মিয়া বাদী হয়ে শনিবার রাতে বালাগঞ্জ একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। পরদিন রবিবার অভিযোগটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হামছাপুর গ্রামের লতিব উল্যার ছেলে সুরত আলী, শামছুজ্জামান, ফরিদ মিয়ার ছেলে দিলদার আলী, খালিছ মিয়ার ছেলে ফরহাদ মিয়া ও আরফান উল্যার ছেলে ফরিদ মিয়াসহ আরও ২-৩ জন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কামরুলদের বাড়ির পাশেই তার মামা জামাল মিয়ার বাড়ি। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কামরুল তার খালাকে নিয়ে মামা জামাল মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর অভিযুক্ত সুরত কামরুলের খালাকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। গালাগালের প্রতিবাদ করলে সুরতসহ অন্যান্যরা কামরুল ও তার খালার প্রতি মারমুখী হন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সেখানে দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি সৃষ্টি হলে কামরুলসহ অভিযুক্ত সুরত ও তার ভাই শামছুজ্জান কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হন। পার্শ্ববর্তী লোকজনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি আপসে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়ে কামরুল ও তার খালাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আপসের বিষয়টি অমান্য করে সুরত আলী ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

এজাহারের বিবরণ ও স্থানীয়দের বর্ণনামতে, কামরুল বাড়িতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অভিযুক্ত সুরতের নেতৃত্বে অন্যান্য অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কামরুলের বাড়িতে যায়। কোনো কিছু বোঝার আগেই কামরুলের পিঠে, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। কামরুলকে রক্ষা করতে গিয়ে তার বড়ভাই এমরান ও খালাসহ আরও কয়েকজন আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা কামরুলকে জাপটে ধরে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। এরপর থেকে কামরুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে অভিযুক্ত দিলদারের বাড়ির নিকট জনৈক ফজল মিয়ার পুকুরে কামরুলকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। খবর পেয়ে রাত ১২টার দিকে বালাগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

কামরুলের স্বজনরা জানান, তারা দুই ভাই-বোন। বাবা বেঁচে নেই, মা সৌদিতে থাকেন। স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, তুচ্ছ একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে আসামিরা কামরুলকে নির্দয়ের মতো পিটিয়েছে। তাকে জাপটে ধরে টেনে-হিঁচড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। লাশ উদ্ধারের পর আমরা দেখেছি তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। আমরা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা গরিব, অসহায় মানুষ। আমরা কি ন্যায়বিচার পাবো না? আসামিরা প্রভাবশালী, তাদের টাকার জোর আছে। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে তারা আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে আসার পর তার মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তারা পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।


এসএ/আরআর-০১