শুয়াইব হাসান
আগস্ট ১০, ২০২১
০৪:১৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১০, ২০২১
০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
সংকট মোকাবেলায় হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। চলতি মাসেই নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট নগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় এক হাজার বেড থাকা সত্ত্বেও জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ, বিভাগের তিন জেলা সদর হাসপাতালে চালু করা করোনা ইউনিটে ২৬০ শয্যার মধ্যে ১২৩টিই খালি পড়ে আছে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় আইসিইউ শয্যাও চালু করা যাচ্ছিল না। সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছিল। এ কারণে এই তিন হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপও কম।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট থাকায় জেলা হাসপাতালগুলোতে ভরসা করতে পারছেন না অনেকে। তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট শহরে ছুটে আসছেন। এ কারণে সিলেট নগরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অনেক বেশি।
তবে, করোনা সংক্রমণ বাড়ায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দ্রুত অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, তিন জেলা হাসপাতালে আগামী এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্ল্যান্ট চালু করে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হবে।
গত বছর হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যার হাসপাতালে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও সেন্ট্রাল লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ইতোমধ্যে অক্সিজেন লিকুইড ট্যাংক স্থাপন করেছে প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান। আগামী সাত দিনের মধ্যেই কাজ শেষ করে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান লিনডে।
হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোমেন উদ্দিন চৌধুরী জানান, প্ল্যান্টটি গত বছর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ট্যাংক স্থাপন হয়েছে। ৫ হাজার ৬৪৪ লিটার অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতার সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু হলে করোনা রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া সহজ হবে। আইসিইউ সেবাও নিশ্চিত করা যাবে।
এই হাসপাতালে চালু করা করোনা আইসোলেশনে বতর্মানে ১০০ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৭৪টি শয্যা খালি ছিল। এতদিন হাসপাতালে নিজস্ব অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তি সহযোগিতায় রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া কয়েকজন রোগী মারা গেছেন। তাঁদের স্বজনদের অভিযোগ ছিল অক্সিজেন সংকটের।
স্থানীয় এমপি আবু জাহির জানান, করোনা পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন। সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের যাবতীয় প্রস্তুতি এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রকৌশলী তাকে জানিয়েছেন। এটি চালু হলে অক্সিজেন সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীদের নিয়মিত অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্টও চালু হবে। প্ল্যান্টটি চালু হলে অক্সিজেনের সংকট কেটে যাবে।
মৌলভীবাজারে ১১ হাজার ও সুনামগঞ্জে ৬ হাজার লিটারের অক্সিজেন প্ল্যান্ট: মৌলভীবাজারে হাসপাতালে ১১ হাজার লিটার এবং সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৬ হাজার লিটারের অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গঠিত কোভিড তহবিলের টাকায় ৩০টি হাসপাতালে গ্যাস পাইপলাইন ও লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের অংশ হিসেবে এই দুই হাসপাতালে অক্সিজেন ব্যবস্থার কাজটি করছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বাংলাদেশ।
এই দুই হাসপাতালে অক্সিজেন লাইন ও ট্যাংকের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের প্রকৌশলী তাহমিদুর রহমান শাকিল সিলেট মিররকে জানান, মৌলভীবাজারে ইতোমধ্যে ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ হাসপাতালের জন্য ট্যাংক প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এটি পৌঁছে যাবে। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দুই হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফয়সাল জামান জানান, সদর হাসপাতালে বর্তমানে ৬০টি শয্যা করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বরাদ্দ। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৫৫টি শয্যা পূর্ণ এবং ৫টি শয্যা খালি রয়েছে। মাঝেমধ্যে ৬০ শয্যার একটিও খালি থাকে না। তবে, এই মুহূর্তে রোগীদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট সবচেয়ে জরুরি। যা নিয়ে আমরা সবসময় শঙ্কায় থাকি। অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু হলে প্রয়োজনে করোনা ইউনিটে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে। তখন অক্সিজেন নিয়ে শঙ্কা থাকবে না।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যায় করোনা চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ। গতকাল রাত পর্যন্ত ২৬টি শয্যা খালি ছিল। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান জানান, অক্সিজেন গ্যাস লাইন স্থাপন ও অক্সিজেন ট্যাংক রাখার জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী তাকে জানিয়েছেন- দু-তিনদিনের মধ্যে ট্যাংক পৌঁছে যাবে। এরপর এটি চালু করতে দুই বা তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যা থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট থাকায় এখনও চালু করা যায়নি বলে জানান তিনি। তবে, অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হলে করোনা রোগীদের জন্য উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
গত একমাস ধরে সিলেট বিভাগে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে। এরই মধ্যে শনাক্তের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও সিলেট জেলায় সংক্রমণের হার অনেক বেশি। তবে, সেবার মান উন্নত হওয়ায় বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে রোগীরা সিলেট শহরে আসছেন। এ কারণে হাসপাতালে জায়গা মিলছে না।
ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে চালু হওয়া করোনা ইউনিটে ৩১৫ শয্যা ও করোনা ডেডিকেটেড শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আছে আরও ৫শ শয্যা। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ’র সংখ্যা ১৩৭টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সিলেট শহরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। এ জন্য ওসমানীর নতুন ভবনে সাড়ে ৪০০ শয্যার একটি করোনা ইউনিট চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, অক্সিজেন জটিলতায় সেটিও চালু করা যাচ্ছে না। বিভাগের তিন জেলায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসে এগুলো চালু করা সম্ভব হলে সিলেট শহরে রোগীর চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
আরসি-০১