সিলেটে তিনদিনে টিকা নিয়েছেন আড়াই লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ১০, ২০২১
০৫:৩৫ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১০, ২০২১
০৫:৩৫ অপরাহ্ন



সিলেটে তিনদিনে টিকা নিয়েছেন আড়াই লাখ মানুষ

সিলেটে শেষ হয়েছে জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইন। সোমবার (৯ আগস্ট) সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদানের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শেষ হয়। তিন দিনে সিলেট বিভাগে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫৮ জন টিকা নিয়েছেন। তবে এর চেয়ে বেশি মানুষ টিকাকেন্দ্রে গিয়েও টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নির্দেশনামতে আবারও টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হবে। 

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সারাদেশের মতো সিলেটেও শুরু হয় জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইন। প্রথম দিন বিভাগের ৫৯৫টি কেন্দ্রে ২ লাখ ১২ হাজার ৩৬৫ জন টিকা নেন। তবে বাকি দুই দিন টিকাদান কার্যক্রম চলে শুধু সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায়। এর মধ্যে দ্বিতীয় দিন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮১টি কেন্দ্রে টিকা নেন ২৪ হাজার ২৯৪ জন। আর গতকাল সোমবার শেষ দিনে টিকা নিয়েছেন ১৯ হাজার ৩৯৯ জন। 

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চললেও টিকা নিতে আগ্রহীরা ভিড় জমান সকাল ৬টা থেকেই। সকাল ৯টায় টিকাদান শুরু হওয়ার আগেই কেন্দ্রের সামনে দ্ইুশ থেকে তিনশ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ে আরও বেশি। তবে কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন টিকা মজুত ছিল ২০০ থেকে ৩০০ ডোজ। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই টিকা শেষ হয়ে যায় দুুপুরের আগেই। ফলে টিকা পেয়েছেন যত মানুষ তার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ মানুষ টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। এছাড়া স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রতিদিন লাইন ভেঙ্গে টিকা দেওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিকাকার্ড নিয়ে গিয়েও টিকা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল সাধারণ মানুষের। 

টিকা ক্যাম্পেইনের তিনদিনই চার থেকে পাঁচঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা পাননি নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নূর ফাতেমা ইসলাম। সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটায় কাজীটুলা সূর্যের হাসি ক্লিনিক কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তিনদিনই আমি সকাল আটটায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। গত দুই দিনও টিকা পাইনি। আজও বলা হচ্ছে টিকা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়ে টিকা নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন।’

এ দিন তিন কেন্দ্র ঘুরে টিকা পাননি টিলাঘর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে দুটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াই। কিন্ত উভয় কেন্দ্রই বলে আমার ভোট যেখানে সেখানে টিকা নিতে হবে। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা যিনি যে এলাকায় আছেন সেখানেই টিকা নিতে পারবেন। বারোটার দিকে আসি চৌহাট্টার মাতৃমঙ্গল কেন্দ্রে। এখানে এসে দেখি টিকা শেষ হয়ে গেছে।’

আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা পেয়ে খুশি অনেকেই। তারা বলছেন, টিকা ক্যাম্পেইনের কারণে নিবন্ধনের ঝামেলা ছাড়াই শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই টিকা পেয়েছেন তারা। 

নগরের কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা নেওয়া আয়েশা বেগম সিলেট মিররকে বলেন, ‘টিকা নিতে কষ্ট হয়েছে। তবে টিকা নিতে পেরে অনেক বেশি খুশি। কষ্ট হলেও সবার টিকা নেওয়া উচিত।’

এদিকে, শেষ দিনে যারা টিকা পাননি কেন্দ্রগুলো থেকে তাদের বলা হয়েছে, আগামী ১৪ আগস্ট থেকে আবারও টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হবে। তখন সবাই টিকা পাবেন। ফলে টিকা না পাওয়া ব্যক্তিরা অপেক্ষায় আছেন আবারও টিকা ক্যাম্পইন শুরুর। 

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে আমরা সর্বোচ্চ টিকা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এর বেশি টিকা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে টিকা ক্যাম্পেইন বন্ধ হলেও নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম চলবে।’

আবার কবে টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের একটি সিদ্ধান্ত আছে আগামী ১৪ আগস্ট থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরুর। সরকারের নির্দেশনা পেলেই আমরা ক্যাম্পেইন শুরু করব।’

যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা সংরক্ষিত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। যারাই প্রথম ডোজ পেয়েছেন তারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা অবশ্যই পাবেন।’

শেষ দিনে জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনের বিভিন্ন টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় তিনি টিকা নিতে আসা নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান। 

মেয়র বলেন, ‘সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রে টিকা গ্রহণ করতে হবে। টিকা নিতে এসে যাতে করোনা সংক্রমনের কবলে কেউ না পড়েন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

এনএইচ/আরসি-০৯