নাবিল হোসেন
আগস্ট ১১, ২০২১
০৪:০০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১১, ২০২১
০৪:০০ পূর্বাহ্ন
করোনা সংক্রমণে বিপর্যস্ত সিলেট। প্রতিদিন বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যু। করোনার পাশাপাশি অনেকেই মারা যাচ্ছেন জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ নিয়ে। সিলেট মহানগরের পাঁচ হাসপাতালে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বাসা-বাড়ি ও উপজেলাগুলোতে অনেকেই করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন। এই সময়ে সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পাঁচ হাসপাতালের মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে মারা গেছেন ৭৪ জন। এছাড়া উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জনের, শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ৯ জনের, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জনের এবং মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পয়লা আগস্ট থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। আর স্বজনরা রোগীদের এমন সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন, যখন অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এ সময় পরীক্ষা করারও সময় পাওয়া যায় না।
উপসর্গ নিয়ে মৃতের তালিকায় যাদের নাম ওঠানো হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি পাওয়া যায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এসব রোগীর জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো উপসর্গও থাকছে। তবে তা শুরুর দিকে বেশি দেখা যায়। পরে রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্বজনেরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এদিকে সিলেটের অন্যান্য হাসপাতাল, বিভাগের বাকি তিন জেলার হাসপাতালগুলোতেও করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছেন। এছাড়া জেলা ও উপজেলায় বাসা-বাড়িতে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে তথ্য লুকিয়ে দাফন করা হচ্ছে বেশিরভাগের।
গত ৫ আগস্ট সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পর ৭ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী মারা যান। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই নারীর করোনার উপসর্গ ছিল। শ্বাসকষ্ট এবং কাশিও ছিল। বাড়ি থেকে তাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
৫ আগস্ট রাতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক সৈয়দ তইফুর রহমান করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। আমাদের ওসমানীনগর প্রতিনিধি জানান, গত ৪ আগস্ট উপজেলায় একদিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবু ইসহাক সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন রোগী আসছেন। যাদের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার উপসর্গ রয়েছে। এছাড়া উপজেলায় অনেকেই করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন। কিন্তু স্বজনরা আমাদের কাছে তথ্য লুকিয়ে দাফন করে ফেলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষায় কিছুটা আগ্রহ বাড়লেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সাধারণ মানুষ পরীক্ষা করাতে চান না। অনেকেই প্রাইভেট চিকিৎসক দেখিয়ে বাসায় ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু যখন শ্বাসকষ্ট বাড়ে তখন তারা হাসপাতালমুখী হন।’
সিলেট নগর এলাকায় করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা হয় মানিকপীর কবরস্থানে। কবরস্থানের সুপারভাইজার মো. রজব আহমেদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘এখন প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ জনকে গোসল করাই যারা করোনা সংক্রান্ত কারণে মারা গেছেন। গোসলের পর অনেকেই এখানে দাফন করেন, অনেকে লাশ নিয়ে যান। জুলাই থেকে করোনা সংক্রান্ত মৃতদের দাফন ও গোসল বেড়েছে। তবে উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে অনেকেই তথ্য লুকিয়ে থাকেন।’
শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মিজানুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘এবারের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত মানুষের ফুসফুসকে সংক্রমিত করছে। ফলে মৃত্যু বাড়ছে। অনেকেই জ্বর-সর্দি হলে প্রথমে বুঝে উঠতে পারছেন না। ফলে এখানে সময় চলে যাচ্ছে। যখন তাদের অবস্থা গুরুতর হচ্ছে তখন তারা হাসপাতালে আসছেন। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও অনেককে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।’
জ্বর-সর্দি বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন চিকিৎসকরা কোভিড টেস্টের পাশাপাশি আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। যার মাধ্যমে রোগীর ফুসফুস সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এ সময় চিকিৎসা শুরু হলে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দেরী করে ফেলেন। তখন রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়। এই কারণেই করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বাড়ছে। তাই করোনার কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসক বা হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে হবে।’
আরসি-০১