শুয়াইব হাসান
আগস্ট ১২, ২০২১
০৪:২৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১২, ২০২১
০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
সিলেট নগরের আম্বরখানা-টিলাগড়, সুনামগঞ্জ অভিমুখী আম্বরখানা-মদীনা মার্কেট ও তামাবিলমুখী নাইওরপুল-টিলাগড় সড়ক। খানাখন্দে জনগুরুত্বপূর্ণ এই তিন সড়কের বেহাল দশা হলেও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরে থাকা এই তিন সড়কের মালিকানা সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ)। কিন্তু, সংস্কারের দায় একে অপরের উপর চাপিয়ে কাটছে বছরের পর বছর।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় হওয়ায় তারা প্রায় সড়ক কেটে নানা কাজ করে থাকেন। তারা এ জন্য এই সড়কগুলো সংস্কার করবেন বলে সওজকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশন বলছে, সড়কের মালিক সওজ। মূলত তারাই এর দায়দায়িত্ব বহন করে। তা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন নাগরিকদের সুবিধার্থে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করে থাকে।
নগরের সাপ্লাই এলাকার বাসিন্দা সালেহ আহমদ খসরু জানান, দুই থেকে তিন বছর ধরে এই সড়কের করুণ অবস্থা। বৃষ্টি হলে পানি জমে পুকুরের মতো অবস্থা হয়। এলাকাবাসী এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। সওজ এবং সিসিকের রশি টানাটানিতে ৫ নম্বর ওয়ার্ডবাসী উন্নয়নবঞ্চিত।
ভোলাগঞ্জ ও তামাবিল সংযোগ সড়কটি নগরের ভিআইপি সড়ক হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন পাথরবাহী হাজার হাজার ট্রাক ও বিমানবন্দরগামী গাড়ি চলাচল করে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সিলেটে এলে সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। তখন সড়কের সাময়িক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়; কিন্তু তা টেকসই হয় না।
এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা জানান, আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে একটু এগুলেই বিশাল বিশাল গর্ত। বড় বাজার রাস্তার মুখ থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সামন, নূরে আলা কমিউনিটি সেন্টারের সামন থেকে চাশনিপীর সড়ক পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কে গর্ত দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় এই সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, গত দুই বছর আগে আম্বরখানা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে আন্ডারগ্রাইন্ড বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। তারও আগে থেকে এই সড়কটি ভাঙা। শুষ্ক মৌসুমে সংস্কারের উদ্যোগ কেউ নেয় না। বর্ষা এলে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়। তখন বৃষ্টির অজুহাতে সংস্কার বিলম্বিত হয়। এই সড়কে গভীর গর্তে সৃষ্টি হয়েছিল। যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে সওজ কিছু ভাঙা ইট ফেলে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে সড়কটি। তবে, বর্ষায় এ ধরনের সংস্কার এক মাসও টিকেনি।
সিটি করপোরেশনের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ জানান, আম্বরখানা থেকে এমসি কলেজ ভিআইপি সড়ক হিসেবে পরিচিত। যদিও এটির মালিক সওজ। সিটি করপোরেশন ড্রেন নির্মাণের কাজ সম্প্রতি শেষ করেছে। এ কারণে এতদিন সড়কটির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।’
এখনও কেন সংস্কার হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সড়ক সংস্কারের আগে দুই পাশ দিয়ে পানির লাইন টানা হবে। এ জন্য টেন্ডার হয়েছে। বৃষ্টির কারণে এ কাজ শুরু হচ্ছে না। শিগগিরই কাজ শুরু হতে পারে। এরপর সড়কেরও কাজ শুরু হবে।’
এই সড়ক ছাড়াও আম্বরখানা থেকে সুনামগঞ্জগামী সড়কের পাঠানটুলা-পনিটুলার মুখে সড়কের বেহাল দশা ছিল দীর্ঘদিন। কিছুদিন আগে এই অংশে সাময়িক সংস্কার করা হয়েছে। তবে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। বারবার ভাঙলেও স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেই কারো।
একই পরিণতি নগরের শিবগঞ্জে নাইওরপুল-টিলাগড় সড়কের। সড়কের শিবগঞ্জ বাজার অংশে এক সময় আরসিসি ঢালাই থাকলেও পরবর্তীতে বিটুমিন দিয়ে (ফ্লেক্সিবল প্যাভমেন্ট) সংস্কার করা হয়। দুই পাশে আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে সড়কটি সম্প্রসারণ করেছে সিসিক। কয়েকটি কালভার্টও নতুন করে নির্মাণ হয়েছে। সিসিকের কাজের প্রয়োজনে সড়কের দুই পাশে ও মধ্যখানে একাধিক স্থানে গর্তও করা হয়। কিন্তু পরে আর সংস্কার হয়নি। এ অবস্থায় শিবগঞ্জ ও মিরাবাজার এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা হয়েছে। গতকাল লকডাউনের মধ্যেও এই সড়কে ভাঙা অংশগুলোতে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
শিবগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ী সুলেমান চৌধুরী জানান, এই সড়কে দুরাবস্থা কাটেনি বছরে পর বছরেও। গত কয়েক বছর আগে শিবগঞ্জ ও মিরাবাজার অংশে বড়ধরনের ভাঙন দেখা দিলেও সিটি আর সওজ তাদের রশি টানাটানিতে ব্যস্ততম এই সড়কের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। এক পর্যায়ে সিসিক এই সড়কটি নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু তা বেশিদিন টেকসই হয়নি। সড়কটির স্থায়ী উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘তিন সড়কেরই সংস্কার প্রয়োজন। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, টেন্ডারও হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’
এদিকে, সড়ক ও জনপথ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, এই তিন সড়ক সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরে হওয়ায় উন্নয়ন কাজের জন্য তারা বিভিন্ন সময় ব্যবহার করে থাকেন। সিসিক তাদেরকে (সওজকে) জানিয়েছে, সড়কের সংস্কার তারা করবেন। এ কারণে এতদিন সওজ অপেক্ষা করেছে। তবে, এতদিন যেহেতু সংস্কার হয়নি তাই তারা নিজেদের অর্থায়নে সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে দেবেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সওজ তাদের সড়ক সংস্কার করবে। কিন্তু, সিটি এলাকায় হওয়ার কারণে এই অজুহাতে তারা আমাদের উপর চাপাচ্ছে। তারা নিজেদের সড়ক কেন সংস্কার করতে অনীহা দেখায়?’- প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমাদেরকে জনগণের স্বার্থের কথা ভাবতে হয় সেজন্য বিভিন্ন সময় সওজের মালিকানাধীন সড়ক সংস্কার করে দিয়েছি। সাপ্লাই সড়কে পানির লাইন টানার কাজ এখনও বাকি। অন্যথায়, সড়ক আবারও কাটতে হবে। তাই, অপেক্ষা করতে হচ্ছে। চলতি বছরই এই সড়কটি সংস্কার হয়ে যাবে।’
আরসি-০১