আফগান নারী চলচ্চিত্র নির্মাতার খোলা চিঠি

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ১৭, ২০২১
০১:২১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৭, ২০২১
০১:২১ পূর্বাহ্ন



আফগান নারী চলচ্চিত্র নির্মাতার খোলা চিঠি

আফগান নির্মাতা সাহরা কারিমি

তালেবানদের আফগানিস্তান দখলের ঘটনায় বিশ্ববাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সাহরা কারিমি। আফগানিস্তানের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নারীদের রক্ষা করার আকুতি ঝরেছে তার এক খোলা চিঠিতে।

কারিমির ফেসবুকে প্রকাশিত চিঠিটি বিভিন্ন ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক সংবামাধ্যমে।

তালেবানরা রবিবার কাবুল দখল করার পর প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি প্রেসিডেন্ট প্যালেস ছেড়ে পালিয়েছেন। কাবুল জুড়ে চলছে বিশৃঙ্খলা। দেশ ছাড়তে মরিয়া মানুষের ঢল নেমেছে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

ফেসবুকে খোলা চিঠির পাশাপাশি একটি ভিডিওবার্তাও দিয়েছেন কারিমি। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘শুভেচ্ছা, তালেবান শহরে পৌঁছে গেছে, আর আমরা পালাচ্ছি।’

ভিডিওতে তাকে দৌঁড়াতে ও অন্যদের পালাতে তাগিদ দিতে দেখা গেছে।

আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তালেবান পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সশস্ত্র লড়াই ও রাজনৈতিক বিপ্লবের ফসল হিসেবে গড়ে ওঠা তালেবান গোষ্ঠী কট্টোর রীতিনীতি এবং নারী অধিকার দমনের জন্য পরিচিত।

২০ বছর আগে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে তালেবান মুক্ত করে। পরের দুই দশকে তালেবান ফিরে আসার প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি নমনীয় রাজনৈতিক নীতি ও দেশবাসীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সচেষ্ট হয়। বর্তমানে তাদের একটি ওয়েসসাইট আছে এবং কাতারে তাদের একটি অফিসও রয়েছে।

২০১৯ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় কারিমির চলচ্চিত্র ‘হাভা, মারিয়াম, আয়েশা’। গর্ভপাতকে উপজীব্য করে নির্মিত সিনেমাটির পরিচালক বলেন, জনগণের কাছে চটকদার ইমেজ থাকলেও, তালেবানের আসল এজেন্ডা মূলত নির্মম সামন্তবাদী, পুরুষতান্ত্রিক ও নারী অধিকার প্রশ্নে প্রাচীনপন্থি।

কারিমি বলেন, ‘তারা নারী অধিকার ছিনিয়ে নেবে। আমাদের নিজ ঘরে ছায়া হয়ে থাকতে হবে। আমার কণ্ঠস্বর, আমাদের প্রকাশভঙ্গিকে তারা চেপে ধরবে। তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল তখন স্কুলে কোনো মেয়ে ছিল না। তাদের যাওয়ার পর ৯০ লাখ আফগান মেয়ে এখন স্কুলে পড়ছে। এই কয়েক সপ্তাহে তারা অসংখ্য স্কুল ধ্বংস করে দিয়েছে ও ২০ লাখ শিশু স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।

‘নিজ দেশে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে আমি যে পরিশ্রম করেছি তার সবকিছুই এখন হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। তালেবানরা ক্ষমতায় এলে শিল্পকে নিষিদ্ধ করে দেবে। আমি ও অন্য নির্মাতারা তাদের হিটলিস্টে চলে আসব।’

সরকারি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান আফগান ফিল্মেরও প্রধান কারিমি। তিনি জানান, তালেবানের এজেন্ডাতে রয়েছে নারী ও উদারনৈতিক শিল্পকে দমন করা।

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে তালেবান আমাদের জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। তারা শিশুদের অপহরণ করেছে, নারী-শিশুদের ভোগ্য হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা পোশাকের কারণে এক নারীকে হত্যা করেছে, একজনের চোখ তুলে ফেলেছে, আমাদের প্রিয় এক কমেডিয়ানকে অত্যাচারের পর হত্যা করেছে। এক ইতিহাসবিদ কবিকে হত্যা করেছে ও সরকারের সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমের প্রধানকে হত্যা করেছে।’

অন্যদিকে, ‘দ্য কাইট রানার’ খ্যাত লেখক খালেদ হোসেইনি তালেবান অধীগ্রহণকে বলছেন দুঃস্বপ্ন।

এক টুইটবার্তায় তিনি লেখেন, ‘আমেরিকানদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। আফগানরা যে ভয় পাচ্ছিলেন সেটা চোখের সামনে বাস্তব হতে দেখতে পাচ্ছি। চল্লিশ বছর ধরে শান্তির খোঁজে থাকা জনগণকে আমরা ত্যাগ করতে পারি না। আফগান নারীদের আর বন্ধ দরজা ও পর্দার আড়ালে দুর্বল করে দিতে পারি না।’

তালেবান কাবুল দখলের ঠিক আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি প্রেসিডেন্ট প্যালেস ছেড়ে পালিয়ে যান। এক ফেসবুক পোস্টে ঘানি বলেন, ‘তালেবানের কারণেই আমাকে সরে যেতে হয়েছে। তারা কাবুল ও এখানকার নাগরিকদের আক্রমণ করতে এসেছে। রক্তের বন্যা এড়াতেই আমার মতে বের হয়ে যাওয়া সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। তালেবান বিচারের তলোয়ার ও বন্দুকের দখল নিয়েছে। এখন তাদের হাতেই দেশের জনগণের মান, সম্পদ ও আত্মসম্মান রক্ষার দায়িত্ব।’

তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেন, আগামী কয়েকদিনে আফগানিস্তানে তারা ‘ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হাতবদল’ চায়।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা কাবুলের জনগণকে নিশ্চিত করতে চাই যে, তাদের জীবন ও সম্পত্তি নিরাপদে আছে।’


এএফ/০৪