নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১৮, ২০২১
০৬:১৫ অপরাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১৮, ২০২১
১০:০১ অপরাহ্ন
সিলেটে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া এক নারীকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে মডার্নার। মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার শরীরে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হয়। ওই নারীর শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। তবে মিশ্র টিকার ডোজ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সেই নারী ও পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে, সিলেট নগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সন্ধ্যা রানী দাস (৬০) গত ২৬ এপ্রিল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। এ সময় তিনি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা নেন। তবে এরপর টিকা সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে যায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান। তখন থেকেই সন্ধ্যা রানী দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় ছিলেন।
গত ১৪ আগস্ট তার মোবাইলে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের তারিখ জানিয়ে বার্তা (ম্যাসেজ) আসে। এতে বলা হয়, ১৭ আগস্ট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে তাকে। সে অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি হাসপাতালে যান। কেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথে টিকা নিতে যান তিনি। তখন টিকাদানকারী নার্স কাগজ না দেখেই সন্ধ্যা রানীর শরীরে মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই নারী ও তার স্বামী গতকাল মঙ্গলবার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসেন। এ সময় স্বামী পুরুষ লাইনে এবং সন্ধ্যা রানী দাস নারী লাইনে টিকা নিতে দাঁড়ান। তবে তার স্বামীকে টিকা দেওয়ার আগে টিকাকার্ড স্ক্যান করতে গিয়ে ধরা পড়ে তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে এসেছেন। এই অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা সন্ধ্যা রানীর খোঁজ করতে গেলে দেখতে পান তিনি মডার্নার টিকা গ্রহণ করে ফেলেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই নারীকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পর সাড়ে তিন মাস সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য ধরনের টিকা দেওয়ায় ওই নারীর কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা হবে না। তবে এক মাস পর ওই নারীকে পুনরায় মডার্নার টিকা দেওয়া হবে।
দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, প্রথম ডোজ হিসেবে যারা আগে কোভিশিল্ডের টিকা নিয়েছিলেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ নগর ভবনে স্থাপিত কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে। এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে এখন শুধুমাত্র মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, সন্ধ্যা রানীর জামাতা হিমেল সরকার অভিযোগ করেন, তার শাশুড়ির মোবাইলে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী তিনি সেখানে যান। কেউ তাকে নগর ভবনে গিয়ে টিকা দিতে হবে, এমনটা জানায়নি। তবে নার্সের ভুলে মিশ্র টিকা দেওয়ার বিষয়টি যখন ধরা পড়ে, তখন তারা দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে বিষয়টি সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামকে অবহিত করেন তারা। মিশ্র টিকা দেওয়ার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার শাশুড়ির কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না, তা নিয়ে পরিবারের সবাই চিন্তিত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা বার বার প্রচার করছি অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকা সিলেট সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে (নগর ভবনে) দেওয়া হচ্ছে। কেউ যাতে মিশ্র ডোজের টিকা নিতে না পারেন সেজন্য আমরা অ্যাস্ট্রজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নগর ভবনে দিচ্ছি। তবুও এই ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকাগ্রহণকারীদের প্রচন্ড ভিড় থাকায় টিকাদানকারী নার্স টিকা কার্ডটি দেখতে পারেননি। টিকা কার্ড দেখলে হয়ত এমন ভুল হত না।’
মিশ্র ডোজ টিকা গ্রহণকারী নারী ভালো আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে আমরা পর্যবেক্ষণে রাখছি। তার শরীরে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। এছাড়া সাড়ে তিন মাসেরও বেশি আগে ওই নারী কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাই কোনো সমস্যা হবে না। আমরা এ বিষয়ে ঢাকায়ও কথা বলেছি। এক মাস পর ওই নারীকে আবার মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। তখন তার শরীরে মডার্নার টিকার কার্যকারিতা তৈরি হবে।’
টিকা সনদ গ্রহণে ওই নারীর কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিকা সনদ তুলতে ওই নারীর কোনো সমস্যা হবে না।’
এনএইচ/আরসি-১০