নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ২২, ২০২১
০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ২২, ২০২১
০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গত জুলাইয়ে ভয়ঙ্কর সময় পার করেছে সিলেট। প্রতিদিন শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় সিলেটের হাসপাতালগুলোতে শয্যা সঙ্কট দেখা দেয়। তবে কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ কমতির দিকে থাকায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমছে।
সিলেটে গত বছরের ৫ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। মে-জুনে শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। তবে আগস্টের পর থেকে আবার কমতে থাকে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এপ্রিলে বাড়ে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। মে মাসের প্রথম থেকে আবার শনাক্ত কমতে থাকলেও ঈদুল ফিতরের পর বাড়তে শুরু করে। আর জুনের শেষ দিকে বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে।
এদিকে, জুলাইয়ে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছালে সিলেটের হাসপাতালগুলোতে দেখা দেয় আইসিইউ ও শয্যা সঙ্কট। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে শয্যা না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়েও রোগীর জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে অনেকে রোগীই হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে শয্যা না পেয়ে মারা যান।
চলতি আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবার সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে সঙ্গে কমছে হাসপাতালে রোগীর চাপও। আগস্টের প্রথম ১৮ দিনে বিভাগে ১০ হাজার ৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে প্রথম ৯ দিনে শনাক্ত হয় ৬ হাজার ২ জনের। আর শেষ ৯ দিনে শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৬ জনের। শনাক্ত রোগীর সঙ্গে কমেছে শনাক্তের হারও। চলতি মাসের প্রথম দিন বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ৪৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর গতকাল বৃহস্পতিবার তা নেমে এসেছে ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশে।
জুলাইয়ের প্রথম থেকেই সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের ১০০ শয্যা ছিল রোগীতে পরিপূর্ণ। রোগীর চাপে কখনও কখনও এক কেবিনে দুইজন রোগীকে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে কমে এসেছে ভর্তি রোগীর সংখ্যা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ৭৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত ৫৫ জন। আর বাকিরা করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. নাফী মাহদি সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালে এখন রোগীর চাপ কমতে শুরু করেছে। তাই শয্যা খালি রয়েছে। তবে এখনও আইসিইউ শয্যা রোগীতে পরিপূর্ণ রয়েছে।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ১২০ শয্যা নিয়ে শুরু হয় করোনার চিকিৎসা। তবে রোগীর চাপ এক পর্যায়ে এই ইউনিট ৩২৫ শয্যায় উন্নীত করা হয়। শয্যা বাড়িয়েও কয়েকদিন আগে রোগী জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল হাসপাতালটিতে। তবে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত এই হাসপাতালে ২৬০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘৫ দিন ধরে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমছে। শনাক্ত কমে আসায় রোগীর সংখ্যাও কমছে।’
সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালেও রোগী ভর্তির সংখ্যা কমছে। নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. নাজমুল হক সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত সপ্তাহ-পাঁচদিন থেকে রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে বলে মনে হচ্ছে। আগে হাসপাতালের কোনো শয্যাই খালি ছিল না। বর্তমানে শয্যা খালি আছে।’ শয্যা খালি থাকলেও আইসিইউ ইউনিট এখনও রোগীতে পরিপূর্ণ বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫১৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরমধ্যে সিলেট জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪১৭ জন, সুনামগঞ্জের হাসপাতালে ৩৯ জন, হবিগঞ্জের হাসপাতালে ৩৫ জন ও মৌলভীবাজারের হাসপাতালে ২৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
এনএইচ/বিএ-১২