নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
০৪:০৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
০৪:০৫ পূর্বাহ্ন
সিলেটের আবহাওয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিবর্তন লক্ষণীয়। দিন থেকে রাত পর্যন্ত থাকছে প্রচন্ড গরম। আবার মধ্য রাতে পড়ছে হাল্কা ঠান্ডা। এতে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও কিশোর।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাল ফ্লুর জন্য জ্বর-সর্দির প্রকোপ বেড়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
নগরের কাজীটুলা এলাকার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহিয়া খান গত এক সপ্তাহ আগে জ্বরে আক্রান্ত হন। দুই দিন পর জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হন তার ছোট ভাই ও বোন। তারা সুস্থ হয়ে উঠলে জ্বরে আক্রান্ত তাদের বাবা কবির আহমদ।
কবির আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রথমে বড় মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হওয়া পর বাসার প্রায় সবাই জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হই। প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জানতে পারলাম আবহওয়া পরিবর্তন হওয়ায় ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছি। চিকিৎসকের কাছে আমার মতো আরও অনেকেই জ্বর-সর্দি ও কাশি নিয়ে এসেছেন।’
সিলেটে গত কয়েকদিন থেকে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তীব্র গরমের কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। গরমের কারণে কোমল পানীয় পানে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে মধ্য রাতে কিছুটা ঠান্ডা অনুভ‚ত হচ্ছে। আবহাওয়ার এই বৈপরীত্যে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।
এদিকে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু বা কিশোর। বাসায় একজনের জ্বর হলে বাকিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর, সর্দি-কাশিতে। তবে জ্বর-সর্দি ও কাশিতে চার-পাঁচ দিনের বেশি থাকছে না। এদিকে জ্বর-সর্দি-কাশি বাড়ায় নগরের ফার্মেসিগুলোতে প্যারাসিটামল জাতীয় জ্বর-সর্দির ওষুধ বিক্রি বেড়েছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত চার-পাঁচদিন থেকে জ্বর-সর্দির ওষুধের বিক্রি বেড়েছে। বেশিরভাগ ক্রেতারা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ নিচ্ছেন।
নগরের সুবিদবাজার এলাকার রুহেল আহমদ বলেন, ‘আমরা বড় ছেলে গত ৫ দিন আগে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছে। সে কিছুদিন আগে স্কুলে গিয়েছিল। পরে আমার ছোট মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়। এতে করে ভয় পেয়ে যাই। অবশ্য ফার্মেসি থেকে জ্বর-সর্দির ওষুধ খাওয়ানোর পর ছেলে সুস্থ হয়ে উঠেছে।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জ্বর-সর্দি-কাশির তীব্রতা থাকছে তিন থেকে সাতদিন। এক্ষেত্রে বিচলিত হওয়া যাবে না। জ্বর কিংবা ঠান্ডা, গলা খুসখুস মানেই করোনা নয়। ভাইরাল ফ্লু এর জন্য অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই জ্বর হলেই আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হলে তাকে বিদ্যালয়ে দেওয়া উচিত হবে না।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শুক দেব পাল সিলেট মিররকে বলেন, ‘ভাইরাল ফ্লু এর জন্যই জ্বর-সর্দির প্রকোপ বাড়ছে। শিশু ও বাচ্চারাই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। বড়দের মধ্যে এ প্রকোপ তুলনামূলক কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাল ফ্লু ও করোনার উপসর্গ প্রায় একই। তবে কোভিডে আক্রান্ত হলে ফুসফুস দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে শ্বাসকষ্ট হয়। সাধারণ ফ্লুতে এমনটা হয় না। এছাড়া এক সপ্তাহের বেশি জ্বর-সর্দি থাকলে ও স্বাদ-গন্ধ না পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে জ্বর-সর্দি না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার অনেক ভেবে-শুনে স্কুল খুলেছে। এছাড়া স্পষ্ট নির্দেশনা আছে জ্বর-সর্দি থাকলে শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলে না আসে। এ বিষয়ে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
এনএইচ/আরসি-০১