কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
১১:০১ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
০৫:০৫ পূর্বাহ্ন
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর। যত দূরে চোখ যায়, চোখে পড়বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সাদা সাদা পাথর। ওপারে ভারতের উঁচু পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মায়াজাল। সেখান থেকে নেমে আসা ঝর্নার শীতল স্বচ্ছ নীল জল, সাদা পাথর আর পাহাড়ের সবুজ মিলেমিশে যেন একাকার। ধলাইয়ের বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকৃতিপ্রেমী হাজারও মানুষ প্রতিদিন এখানে ছুটে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু আনন্দ উপভোগ করতে এসে অনেকেই পড়েন বিপাকে। সিলেট শহর থেকে বাস, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা মোটরসাইকেল নিয়ে সাদা পাথর নৌকাঘাটে এসে সেখান থেকে ৮০০ টাকা ভাড়ায় নৌকা রিজার্ভ করে যেতে হয় মূল পর্যটন কেন্দ্রে। এখানে নেই কোনো হোটেল-রিসোর্ট। নেই কোনো সরকারি ব্যবস্থাপনা। যার ফলে পর্যটকদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, টাকা বা মূল্যবান মালপত্র রাখতে হয় বিভিন্ন অনিরাপদ স্থানে। এর ফলে প্রায় সময়ই ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। চুরি হচ্ছে পর্যটকদের মোবাইল ফোন ও টাকা সহ মূল্যবান মালামাল। চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় কারও কাছে অভিযোগ করেও লাভ হচ্ছে না। এতে করে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা। যদিও ব্যক্তিগতভাবে এখানে মালামাল রাখার জন্য রয়েছে অল্প কিছু ব্যবস্থা। তবে তা খুবই সামান্য।
জানা গেছে, পর্যটকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু বর্তমানে সাদা পাথরের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটকদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে আগত পর্যটকদের আগের মতো নিরাপত্তা দেওয়া কিংবা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যটকরা ঝুঁকি নিয়ে প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে নদীর এপার থেকে ওপারে যাচ্ছেন। যার ফলে গত দুই বছরে পানিতে ডুবে নিহত হয়েছেন তিনজন পর্যটক। গেল এক মাসে বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত পর্যটকদের মোবাইল, টাকা, ব্যাগ চুরিসহ ১০টি ঘটনা ঘটেছে।
গত সোমবার ঢাকা থেকে আগত পর্যটক ইয়াছিন আরাফাত বলেন, সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র অনেক সুন্দর ও মনোরম। স্বচ্ছ পানিতে গোসল করে মনটা জুড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আমার মোবাইল, টাকা ও ব্যাগ চুরি হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন কেন্দ্রে নেই কোনো ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নিরাপত্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বলেন, প্রায়ই পর্যটকরা এমন অভিযোগ করেন। এটি আমাদেরও খারাপ লাগে। এখানে নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত।
এদিকে, সাদা পাথরে অবস্থানের ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও বেশিরভাগ পর্যটকই তা মানছেন না। অনেকে সেখানে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত অবস্থান করছেন। সীমান্তবর্তী ও নির্জন এলাকা হওয়ায় এখানে সন্ধ্যার পর অবস্থান নিরাপদ নয়। তাই উপজেলা প্রশাসন সন্ধ্যার আগে আগে সাদা পাথর থেকে সরে আসার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। এমতাবস্থায় দেশের এই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। সিলেটের সকল পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকলেও সাদা পাথরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে এখনও ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়নি।
স্থানীয় কসমেটিকস ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস খন্দকার বলেন, জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র সাদা পাথর। এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই, যা খুবই দুঃখজনক। পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
কোম্পানীগঞ্জ ফটোগ্রাফি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফ আহমেদ বলেন, প্রায়ই পর্যটকদের মোবাইল, মানিব্যাগসহ মূল্যবান মালামাল চুরির ঘটনা ঘটছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে এখানে বিজিবি দায়িত্বে রয়েছে। সীমান্তরক্ষার পাশাপাশি তারা পর্যটকদের নিরাপত্তা দেন। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকলে পর্যটকরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাবেন।
এ ব্যাপারে সিলেট ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে ডিসি অফিসে ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অফিসে যোগাযোগ করছি সাদা পাথরে ট্যুরিস্ট পুলিশ দেওয়ার জন্য। তাদের কাছে দাবি জানিয়েছি, সাদা পাথর একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র এবং এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ অত্যন্ত জরুরি।
কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, সাদা পাথর বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন এখানে অন্তত ৪-৫ হাজার পর্যটক আসেন। এই পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকা জরুরি। মোবাইল ফোন, টাকা, মানিব্যাগসহ মূল্যবান মালামাল চুরি হওয়ার ফলে নিরাপত্তাহীনতায় পর্যটকরা এখানে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য বলেন, সাদা পাথর একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকা প্রয়োজন। ট্যুরিস্ট পুলিশ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি এখানে দ্রুত ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা হবে।
এ ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম দৈনিক সিলেট মিররকে জানান, সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সাদা পাথর। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি টিম দেওয়া জরুরি। কিন্তু জনবল সংকট থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি ইউনিট দেওয়া হবে।
এমকে/আরআর-০২