ফুরিয়ে আসছে সিলেটের গ্যাস

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ০২, ২০২১
০৪:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০২, ২০২১
০৪:১৩ অপরাহ্ন



ফুরিয়ে আসছে সিলেটের গ্যাস

গ্যাসের রাজ্যখ্যাত সিলেটের গ্যাস ফুরিয়ে আসছে। তবে শুধু সিলেটেই নয় সারাদেশেই একই অবস্থা। নতুন করে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বড় সাফল্য না পাওয়া দ্রুত মজুত ফুরিয়ে আসছে। এটা অব্যাহত থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে চাহিদার পুরো গ্যাস আমদানি করেই চালাতে হবে। 

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট গ্যাস মজুতের পরিমাণ ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এরমধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুতের পরিমাণ ৩০ টিসিএফ। এখন পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫৩ টিসিএফ। অবশিষ্ট আছে ১১ দশমিক ৫২ টিসিএফ। 

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এখন প্রতি বছর গড়ে এক টিসিএফ করে গ্যাস উত্তোলন হয়ে থাকে। অর্থাৎ অবশিষ্ট মজুদে আর ১০ বছর মতো চলবে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে প্রতি বছরই গ্যাস উত্তোলন ক্ষমতা কমে আসবে। এতে করে শেষের বছরগুলাতে সংকট আরও প্রকট হবে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে আসলে আনুপাতিক হারে আমদানি বাড়াতে হবে। 

জানা গেছে বাপেক্স-এর ৮টি গ্যাস ক্ষেত্রের মোট মজুত ১ দশমিক ৪৬ টিসিএফ থেকে ৪৭৩ বিসিএফ তোলা হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে ৯৮৭ বিসিএফ। বাপেক্সের সিলেট অঞ্চলের খনিগুলোর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২৯ বিসিএফ মজুতের ১৬২ তোলা হয়েছে মজুত রয়েছে ১৬৬ বিসিএফ। 

বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির মোট মজুত ১২ দশমিক ২৫২ টিসিএফ, এরমধ্যে তোলা হয়েছে ৮ দশমিক ৭৬৮ টিসিএফ। বাকি রয়েছে ৩ দশমিক ৪৮৪ টিসিএফ। 

সিলেটের খনিগুলোর মধ্যে হবিগঞ্জে দুই দশমিক ৭৮৭ টিসিএফ মধ্যে ২ দশমিক ৫৮৮ টিসিএফ তোলা হয়েছে। বাকি রয়েছে ১৯২ বিসিএফ। 

শেভরন বাংলাদেশের তিন ক্ষেত্রের মোট মজুত ৯ দশমিক ৭৪২ টিসিএফ। উত্তোলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ৪৫৩ টিসিএফ। বাকি রয়েছে ৩ দশমিক ২৮৯ টিসিএফ। শেভরনের বিবিয়ানাতে এখনও ২ টিসিএফ এর একটু বেশি, মৌলভীবাজারে ১৫৮ বিসিএফ এবং জালালাবাদে এক দশমিক ২৬ টিসিএফ মজুত অবশিষ্ট রয়েছে। 

সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মোট মজুতের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩৩ টিসিএফ এরমধ্যে এক ১ দশমিক ৭৮৪ টিসিএফ তোলা হয়েছে। এখানের ৫টি খনিতে এখনও মজুত রয়েছে ৫ দশমিক ২৪৯ টিসিএফ। এখানের পাঁচটি খনি হচ্ছে কৈলাসটিলা, সিলেট, রশিদপুর, ছাতক এবং বিয়ানীবাজার। 

পেট্রোবাংলা বলছে প্রতি মাসেই দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। খনিগুলো থেকে প্রতিমাসে দুই থেকে ৮ ভাগ হারে গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। এখন দৈনিক ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) দেশীয় গ্যাস তোলা হচ্ছে। গত পাঁচ বছর আগেও দেশে প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হতো। কিন্তু এখন তা কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে এসেছে। 

গত দশ বছরে দেশে বড় কোনও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাত্রার (টু-ডি, থ্রি-ডি) জরিপের ফলাফলে সাড়া জাগানো কোনও খবর আসেনি। 

জ্বালানি সচিব মো. আনিছুর রহমান সাম্প্রতিক একটি সেমিনারে বলেন, আমরা গ্যাস অনুসন্ধানে নজর দিচ্ছি। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন হাইপ্রেসার জোনে কাজ করতে। কিন্তু সেখানে কাজ করা যায় কি না দেখা হচ্ছে। এজন্য নতুন প্রযুক্তি খোঁজা হচ্ছে। প্রয়োজনে বাপেক্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করা যায় কি না তা দেখা হচ্ছে। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, সরকারের উচিত হবে খুব দ্রুত সংকট সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া। নাহলে হুট করেই এমন সংকট সৃষ্টি হবে যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, দেশে বেশি বেশি অনুসন্ধান কাজ চালানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানির একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

আরসি-০৬