কানাইঘাট প্রতিনিধি
অক্টোবর ০৪, ২০২১
০৭:৩৪ অপরাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ০৫, ২০২১
১২:০৬ পূর্বাহ্ন
সিলেটের কানাইঘাটে পল্লী বিদ্যুৎতের ছেড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দাদা-নাতির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষোদ্ধ জনতা।
জানাগেছে সোমবার (৪ অক্টোবর) সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নিজ চাউরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ওই এলাকার মাওলানা ফখর উদ্দিন (৭০) ও তার নাতি আরিফুল ইসলাম (৮)।
প্রায় আড়াই ঘন্টা সড়ক অবরোধের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি ও থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন বিক্ষোব্ধ লোকজন।
জানা যায়, কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের নিজ চাউরা উত্তর গ্রামের এমাজ উদ্দিনের বাড়ীর পাশে সোমাবার সকালে পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইনের একটি তার ছিড়ে পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে এলাকার অনেকে ফোন দিয়ে বিষয়টি কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসকে অবহিত করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ জানার পরও পল্লী বিদ্যুতের লোকজন ঘটনাস্থলে না গিয়ে একটি দোকানে চা-পান শেষে ফিরে আসে। দুপুর ১ টার দিকে স্থানীয় নিজ চাউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিজ চাউরা উত্তর গ্রামের রুহুল আমিন এর ছেলে আরিফুল ইসলাম স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে পল্লী বিদ্যুতের ছেড়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে চিৎকার শুরু করলে তাকে বাঁচাতে দাদা মাওলানা ফখর উদ্দিন (৬০) এগিয়ে আসলে তিনিও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই দাদা-নাতির মৃত্যু হয়।
এ সময় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে আহত হন একই গ্রামের ফয়ছল আহমদ ও তার ভাই ফয়েজ আহমদ। স্থানীয় লোকজন স্কুল শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম ও মাওলানা ফখর উদ্দিনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে বেলা আড়াইটার দিকে এলাকার কয়েক শত বিক্ষোব্ধ লোকজন পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের সামনে কানাইঘাট-দরবস্ত সড়ক অবরোধ করে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে ২ জনের করুন মৃত্যু হয়েছে এমন দাবি জানান তারা। এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডিজিএমসহ দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারী বিদ্যুৎ কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা সড়কে যান-বাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে সেখানে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিকেল ৪ টার দিকে নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জী ও থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম, ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হক সেখানে গিয়ে বিক্ষোব্ধ লোকজনকে শান্তনা দেন এবং তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পরে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান লোকজন।
এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষে আওয়ামীলীগ নেতা হুসেন আহমদ, আব্দুল হেকিম শামীম, রফিক আহমদ, সামছুদ্দিন বাবুল মহরিসহ অনেকে এ মৃত্যুর ঘটনার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের দায়ি করে বক্তব্য দেন।
তারা বলেন, খবর পাওয়ার পর বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন সেখানে গেলে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতনা। ২ জনের মৃত্যুর পর তারা সেখানে গিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কোন সেবা পাওয়া যায় না, নানা ধরনের দুর্নীতি হয় ও অফিসের লোকজন গ্রাহকদের কোন অভাব অভিযোগের পাত্তা দেন না। যার কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির কাছে তারা তুলে ধরেন।
তাৎক্ষনিক সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জী নিহতদের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আরো সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বিদ্যুৎ অফিস গেরাও কালে সেখানে ডিজিএমসহ অফিসের কোন পুরুষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন না। নিহতদের লাশ কানাইঘাট থানায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম আখতার হোসেন বলেন, বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে পড়ার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক সেখানে অফিসের লোকজন পাঠিয়েছিলাম। এ অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমাদের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ডিজিএম আখতার হোসেন।
এমআর/বি এন-০৭/বিএ-০২