সিলেটে ১০ ঘন্টার মধ্যে ৩টি অজগর উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ০৯, ২০২১
১২:২১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০৯, ২০২১
১২:২১ পূর্বাহ্ন



সিলেটে ১০ ঘন্টার মধ্যে ৩টি অজগর উদ্ধার
# খাদ্যের অভাবে লোকালয়ে অজগর

সিলেটের বালুচর, আলুরতল এবং মেজরটিলা এলাকার বিভিন্ন বসতবাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার রাত ও আজ শুক্রবার সকালে তিনটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সাপ তিনটি টিলাগড় ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়। সম্প্রতি সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায়ই অজগর উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, খাদ্য সঙ্কটের কারণে লোকালয়ে প্রবেশ করছে অজগর। আর বন বিভাগ জানিয়েছে, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, নীরিহ প্রজাতির অজগর সাধারণত মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।

সিলেট বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বালুচরের জোনাকি আবাসিক এলাকার শাহ আলম মেম্বারের বাড়ি থেকে একটি, আলুরতল এলাকার আব্দুল মান্নানের বাড়ি থেকে একটি এবং মেজরটিলার সৈয়দপুর এলাকার রাবেয়া বেগমের বাড়ি থেকে আরেকটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়। প্রথমটি শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে, পরেরটি রাত সাড়ে ১২টার দিকে এবং সর্বশেষ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভূমিসন্তান বাংলাদেশের কর্মীদের সহযোগিতায় সাপগুলি উদ্ধার করে বনবিভাগ।

মেজরটিলার সৈয়দপুর এলাকার রাবেয়া বেগম বলেন, ‘সকালে মুরগির খামারে সাপ দেখতে পেয়ে আমার জা আমাকে ডেকে আনেন। গত ৬ মাস আমার বাড়িতে ৫টি অজগর সাপ ঢুকে পড়ে। ঘনঘন ঘরে সাপ প্রবেশ করায় আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে আতঙ্কিত না হয়ে আমরা বন বিভাগের কর্মী ও পরিবেশ কর্মীদের খবর দেই। তারা এসে সাপটি উদ্ধার করে নিয়ে যান।’

এ বিষয়ে ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, ‘আগে এই অঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী চা বাগান এবং টিলাগড় ইকো পার্ক এলাকা অজগর সাপের নিরাপদ চারণভূমি ছিলো। কিন্তু স¤প্রতি খাদ্য সংকটের কারণে এসব সাপ লোকালয়ে প্রবেশ করছে।‘ এ সময় তিনি সাপগুলো দেখার পর হত্যা না করে পরিবেশকর্মী ও বনবিভাগকে উদ্ধার করার জন্য জানানোয় স্থানীয়দের ধন্যবাদ জানান।

এদিকে সিলেট বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিলেট চা বাগান বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় এখানে প্রচুর অজগর সাপ রয়েছে। আগে চা বাগানগুলোর ভেতরে অনেক বনমোরগ ও কাঠবিড়ালি পাওয়া যেতো। এগুলো ছিলো অজগরের প্রিয় খাদ্য। কিন্তু এসব এখন কমে গেছে। ফলে অজগর খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। তাই বন ও চা বাগানের আশপাশের বাড়িতে, যেগুলোতে হাঁসমুরগি আছে, সেসব বাড়িতে অনেক সময় অজগর ঢুকে পড়ে। এছাড়া অনেক সময় বাচ্চা প্রসবের জন্যও অজগর লোকালয়ে চলে আসছে। তবে অজগর বিষধর সাপ না হওয়ায় এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে উদ্ধার হওয়া অজগর সাপ তিনটি টিলাগড় ইকো পার্কের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হয়েছে। সিলেটের বালুচর, আলুরতল এবং মেজরটিলা এলাকার বিভিন্ন বসতবাড়ি থেকে এ সাপগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।’

সিলেটে প্রচুর অজগর সাপ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেট বাগান বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় এখানে প্রচুর অজগর রয়েছে। অজগর খুবই নীরিহ ও বিষহীন সাপ। নিজে আক্রান্ত না হলে সে কাউকে কামড় দেয় না। আবার কামড় দিলেও বিষক্রিয়া হওয়ার শঙ্কা নেই। কেবল ঘরের হাঁস-মুরগি লুকিয়ে রাখতে পারলে এই সাপ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।’ তাই অজগর ঘরে প্রবেশ করলেও হত্যা না করে বনবিভাগকে খবর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কি কারণে অজগর লোকালয়ে চলে আসছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। কারণ আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। যেসব স্থান থেকে অজগর উদ্ধার হয়েছে তা আমরা পরিদর্শন করব।’

এনএইচ/আরসি-১০