কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ
অক্টোবর ০৯, ২০২১
০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ০৯, ২০২১
০৬:১২ অপরাহ্ন
সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও শাহ আরফিন টিলা সারাদেশের মানুষই চেনেন। ভোলাগঞ্জ অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি। বর্তমানে পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। আর শাহ আরফিন টিলা পরিচিত টিলা কাটা আর শ্রমিক মৃত্যুর জন্য। কিন্তু এসবের বাইরেও এখানকার মানুষ কত যে দুর্ভোগ পোহান তার একটি উদাহরণ ভোলাগঞ্জ-শাহ আরফিন-ছনবাড়ি সড়ক। এটি সড়কতো নয় যেন ছোটখাটো অসংখ্য পুকুর বেয়ে চলছে যানবাহন। সেইসঙ্গে দুর্ঘটনাতো লেগেই আছে।
উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ভোলাগঞ্জ-শাহ আরফিন-ছনবাড়ি সড়কটি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় কিলোমিটার। দীর্ঘদিন এ অঞ্চলের মানুষ অবহেলিত থাকার পর ২০ বছর আগে ২০০১-০২ অর্থবছরে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু চার বছরের মধ্যেই সড়কটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে সড়কটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেই। গত ১৬ বছরে সড়কটিতে সামান্যতম সংস্কারও করা হয়নি। সড়কটির পিচ উঠে গেছে। স্থানে স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্যা গর্ত। বৃষ্টির পানি জমে থেকে গর্তের গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। ছোট যানবাহন তখন উল্টে পড়ে আহত হন যাত্রীরা।
এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের রস্তমপুর, পাড়–য়া নোয়াগাঁও, বাবুল নগর, নারায়নপুর, চিকাডহর, বাহাদুরপুর, জালিয়ারপাড়, শাহ আরফিন বাজার, ছনবাড়ী ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সীমান্ত পথে যাতায়াতকারী হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো গর্ত বৃষ্টির পানিতে ছোট পুকুরের মতো আকার ধারণ করে আছে। এর মধ্য দিয়ে গাড়ি চলে হেলেদুলে। শুকনো মৌসুমেও এসব গর্তে প্রতিনিয়ত আটকে পড়ে গাড়ি। রাস্তাজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ। বড় বড় গর্ত যেন ছোটখাটো জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। এসব গর্তে জমে থাকে পানি। ফলে কাদা-পানিতে একাকার সড়কে চলতে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। যাত্রীবাহী যানবাহন চলে ঝুঁকি নিয়ে। এভাবে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ সড়কে চলাচলকারী মানুষদের।
জানা গেছে, শাহ আরফিন টিলা থেকে পাথরবহনকারী ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির কার্পেটিং উঠে গেছে কয়েক বছর আগেই। কোথাও কোথাও পাথর-বালুর আস্তরণ পর্যন্ত নেই। আবার কোথাও কোথাও রাস্তার অস্তিত্ব টের পাওয়াই দায় হয়ে পড়েছে। রাস্তায় কিছু দূর পর পর বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে রাস্তার মাঝে। এগুলো একেকটি যেন ‘ছোট পুকুর’। পুকুরের পাড় দিয়ে মানুষ যেমন সতর্ক হয়ে হাটে ঠিক তেমনি পাড় দিয়ে লোকজনকে সাবধানে পা ফেলে গন্তব্যে যেতে হয়।
স্থানীয় মুরব্বি আইয়ুব আলী জানান, যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় মানুষের অসুখ-বিসুখ হলে চিকিৎসা নিতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতে হলেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা কষ্টকর হয়ে যায়।
স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ী রাসেল গাজী বলেন, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষ চরম কষ্ট নিয়ে যাতায়াত করে। সাধারণ মানুষের কষ্ট দেখার কেউ নেই। যার ফলে ১৬ বছরেও সংস্কার হয়নি এই সড়কটি।
এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ছাতক উপজেলার নিজগাঁও গ্রামের শিক্ষার্থী সঞ্জিত শর্মা। তিনি বলেন, ‘অল্প বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কোনো গাড়ি চলা তো দূরে থাক হেঁটে যাওয়াই তখন কঠিন হয়ে পড়ে। জানি না কতদিন আমাদের এ ভোগান্তি সহ্য করতে হবে।’
শাহ আরফিন বাজারের ব্যবসায়ী হেকিম মিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প গ্রামাঞ্চলে রাস্তা পাকাকরণ হলেও এই রাস্তা আজও পাকাকরণ করা হয়নি। সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে আজও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। কেউ অসুস্থ হলে বা কারও প্রসব ব্যথা উঠলে যথাসময়ে ক্লিনিক বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।’
এ ব্যাপারে ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, এই রাস্তাটি আমার ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। রাস্তাটির আরসিসি ঢালাইসহ পুনঃনির্মাণের জন্য এলজিইডি বরাবরে আবেদন করেছি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী মহোদয়ও এ ব্যাপারে অবগত রয়েছেন। আশাকরি, খুব দ্রুত রাস্তাটির পুনঃনির্মাণ করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শাহ আলম দীর্ঘদিন সংস্থার না হওয়া এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করে জানান, রাস্তাটির ক্ষতিগ্রস্ত একটি পুনঃনির্মাণের জন্য প্রাক্কলন করে পাঠিয়েছি। অনুমোদন হলে পুনঃনির্মাণ করা হবে এবং বাকি অংশ পরবর্তীতে সংস্কার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য দৈনিক সিলেট মিরর-কে বলেন, রাস্তাটি পুনঃনির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি, অনুমোদন হলেই দ্রুত কাজ করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল জানান, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কের বেহাল অবস্থা হয়েছে। সড়কের কাজ শিগগির শুরু করা হবে।
আরসি-০২