মো. রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর
অক্টোবর ১২, ২০২১
১২:১২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০২১
১২:১২ পূর্বাহ্ন
ধুলো, শব্দ আর ধ্বংসলীলা। পাথরখেকোদের ক্ষত-বিক্ষত আঁচড়। এসবের কারণে প্রায় বিলীন হতে বসেছিল নদী, পাহাড় ও চা-পাতাবেষ্টিত পর্যটন ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর জৈন্তাপুর উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র শ্রীপুর। যেখানে একসময় ঢাকাই সিনেমার অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের চিত্র ধারণ হতো। সেই পর্যটনকেন্দ্রটি যেন প্রায় বিস্মৃতির আড়ালে হারাতে বসেছিল। অবশেষে ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরছে শ্রীপুর।
পরিবেশ, প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের দাবি, ৪ থেকে ৫ বছর যদি পাথর কোয়ারী বন্ধ রাখা হয় তবে এই পর্যটন কেন্দ্রটি তার অতীত ফিরে পাবে।
সরেজমিনে উপজেলার শ্রীপুর পাথর কোয়ারী এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সিলেটের পর্যটন স্পট এর মধ্যে অন্যতম স্থান ছিল শ্রীপুর। নদী, পাহাড়, অরণ্যবেষ্টিত এবং মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা রংহংকং নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে রাংপানি বা শ্রীপুর নদী হিসেবে নাম ধারণ করে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের বহু ছবির নির্মাণ করা হয়েছে শ্রীপুরে। জৈন্তাপুর উপজেলার নাম নিলে সবার আগে শ্রীপুর পর্যটন স্পটই দৃশ্যপটে হাজির হতো। সময়ের ব্যবধানে তা বিলিন হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, ২০০০ সালের শুরুর দিকে উপজেলার শ্রীপুর পর্যটন কেন্দ্র থেকে পাথর আহরণ শুরু করে একটি পাথরখেকো মহল। সরকারও রাজস্ব আদায়ের জন্য শ্রীপুর নদীটি ইজারা দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় শ্রীপুর পাথর কোয়ারী জন্ম হলে কিছু দিনের মধ্যে শ্রীপুর পর্যটন স্পটটি বিলিন হয়ে যায়। এভাবেই জৈন্তাপুর উপজেলার অন্যতম সৌন্দর্য্যরে পর্যটন কেন্দ্রটি নিয়ে ক্রমশ পর্যটকদের ভাললাগা কমতে থাকে।
২০১৮ সালের শেষ দিকে শ্রীপুর পাথর কোয়ারীকে সংকটাপন্ন ঘোষণার দাবি জানায় বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন পরিবেশবিদ সংগঠন। এসব দাবির প্রেক্ষিতে দেশের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা শ্রীপুর নদীর সরকারি অংশের তলদেশে ত্রি-মাত্রিক জরিপ পরিচালনা করে। সংস্থাগুলো সেখানে আর কোনো পাথরের মজুদ নেই মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ লিজ প্রথা বাতিল করে। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার শ্রীপুর পর্যটন কেন্দ্রটিকে প্রকৃতি তার আপন মহিমায় সাজিয়ে তুলছে।
ঢাকা উত্তরার বাসিন্দা গোলজার হোসেন। বেড়াতে এসেছেন শ্রীপুরে। তিনি বলেন, একসময় আমরা বাংলা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শ্রীপুরের দৃশ্য দেখেছি। এখানে বেড়াতে এসে দেখলাম প্রকৃতি আপন মহিমায় শ্রীপুরকে সাজিয়ে রেখেছে। সত্য কথা হল শ্রীপুর ঘুরতে না আসলে রূপের মহিমাটি কখনও দেখা হতো না। এ পর্যটন কেন্দ্রটিকে সংরক্ষণ করা হলে অসাধারণ পর্যটন স্পট হয়ে উঠবে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সংরক্ষণেরও দাবি জানান এ পর্যটক।
জৈন্তাপুর ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, শ্রীপুর একসময় ছিল উপজেলার জনবহুল স্থানের একটি। কালের বিবর্তনে পরিবর্তন আসে। সম্প্রতি কোয়ারী বন্ধ থাকায় প্রকৃতি নতুন রূপে সাজিয়ে তুলছে তার ক্ষত স্থানকে। সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে দিচ্ছে ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যে। আরও ৪ থেকে ৫ বছর এখানে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখা হলে বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে আকষর্ণীয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে শ্রীপুর। শ্রীপুরকে সংরক্ষণের দাবিও জানান তিনি।
সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি পরিবেশবিদ আব্দুল হাই আল হাদি বলেন, শ্রীপুরের বর্তমান যে চিত্র সরজমিনে দেখা মিলেছে তা অভাবনীয়। শ্রীপুরের এখন যে রূপটি ফুটে উঠেছে তাকে ধরে রাখতে হবে। প্রকৃতিকে ধরে না রাখতে পারলে অচিরেই প্রকৃতির বিপর্যয়ের সম্মুখীন হব আমরা। উত্তরপুর্ব সিলেটের ভ‚মিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে জৈন্তাপুর চিহ্নিত। সেজন্য প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ না করে বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রকৃতি নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
আরসি-০৮