সিলেটে শিশুকে হত্যার পর মায়ের আত্মসমর্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
১১:২৫ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
০২:৫১ পূর্বাহ্ন



সিলেটে শিশুকে হত্যার পর মায়ের আত্মসমর্পণ

অভিযুক্ত মা নাজিমন আক্তার

সিলেটে এক মায়ের বিরুদ্ধে তার দেড় বছর বয়সী শিশু কন্যাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিলেটের শাহপরাণ থানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন অভিযুক্ত মা নাজমিন আক্তার (২৮)।  নিহত শিশুর নাম সাবিহা আক্তার।

 আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট শহরতলির শাহপরান নিপোবন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে আজ সকালে নাজমিন তার মেয়ে সাবিহাকে বালিশচাপা দেন। এ সময় সাবিহার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে সাবিহাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন নাজমিনের বোন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় নাজমিনও হাসপাতালে আসেন। পরে তিনি হাসপাতালে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় গণমাধ্যমের সামনে তিনি মেয়েকে হত্যার বিষয়টি স্বীকারও করেন।

পারিবাহিক কলহের জেরে শিশু সাবিহাকে তার মা শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছেন বলে জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।

তিনি জানান, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গোলাপগঞ্জ এলাকার নাজমিনের সঙ্গে দক্ষিণ সুরমার বদলি এলাকার সাব্বির আহমদের বিয়ে হয় ২০১৫ সালে। বিয়ের পর থেকে তাদের বসবাস শাহপরান এলাকায়। নাজমিন একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তার স্বামী কাতার প্রবাসী। এর আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল নাজমিনের। সেই সংসারে তার একটি সন্তান রয়েছে।

নাজমিন বলেন, ‘বিয়ের পর আমার স্বামী বিদেশ চলে যায়। এরপর চার বছর পর দেশে ফেরে। কিন্তু বিদেশ থাকা অবস্থায় তিনি আমার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেননি। দেশে ফিরে আমাকে অনেক বুঝিয়ে আবার সংসার শুরু করেন তিনি। তখন আমি গর্ভবতী হই। আমাকে গর্ভবতী রেখেই তিনি আবার কাতার চলে যান।’

নাজমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে সাব্বির অভিযোগ করেন আমার গর্ভের সন্তান তার নয়। আমি তখন ডিএনএ টেস্ট করার কথা বলি। কিন্তু সাব্বির ও তার তার পরিবার আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে থাকে।’

মেয়ের চেহেরা অবিকল তার বাবার মতো হয়েছে জানিয়ে নাজমিন বলেন, ‘সাব্বির ১৫ দিন আগে দেশে এসেছেন। কিন্তু একবারও মেয়েকে দেখতে আসেননি। বরং আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছেন। এই দুঃখে আমি আমার মেয়েকে হত্যা করেছি।’

নিজের মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে নাজমিন বলেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসাব না। সাব্বিরকেও ফাঁসাব না। তাকে ফাঁসালেও সে কম শাস্তিতে পার পেয়ে যাবে। তার বিচার আল্লাহ করবেন। আমি আমার মেয়েকে খুন করছি। আমার ফাঁসি হোক।’

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ‘পারিবাহিক কলহের জেরে সাবিহাকে গলা টিপে তার মা নাজমিন হত্যা করেন। ওসমানী হাসপাতালে ওই নারী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেন। তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আর শিশুর মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অভিযক্ত নাজমিনকে আটক করা হয়েছে। তার স্বামী সাব্বিরকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রাখা হয়েছ।’

এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। 


আরসি-০৮/এএফ-০২