রাফিদ চৌধুরী
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
০৪:৩২ অপরাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
০৪:৫০ অপরাহ্ন
শুরুটা করেছিলেন গোলাম ফারুক সুরু। তারই পথ অনুসরণ করেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। এরপর একে একে নাম লিখিয়েছেন আরও ৬ জন। সবশেষ যোগ হয়েছে রেজাউর রহমান রাজার নাম। রাজার এখনও অভিষেক না হলেও বাকিরা সাদা ও রঙিন পোশাকে নিজেদের প্রতিভা দেখিয়েছেন। পাইপলাইনে আছেন অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য তানজিম হাসান সাকিব। তিনিও একজন পেসার। নতুনদের হাত ধরে ফের সিলেটের পেস বিপ্লব দেখছে দেশের ক্রিকেট।
সিলেট থেকে জাতীয় দলের পোশাক গায়ে জড়িয়েছেন তাপশ বৈশ্য, নাজমুল হোসেন ও আবুল হাসান রাজু। তাপশ বৈশ্য আনুষ্ঠানিক অবসর না নিলেও ক্রিকেট ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। নাজমুল হোসেন অবসরে গেছেন। নিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব। অন্যদিকে রাজু পেসার হিসেবে দলে ডাক পেলেও অভিষেকে ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়েছেন অনন্য রেকর্ড। অভিষেক টেস্টে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে করেছেন সেঞ্চুরি। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে।
এই কয়েকজন পেসার সিলেট থেকে জাতীয় দলে গিয়েছেন দীর্ঘ সময় পর পর। তবে বর্তমানে পাশাপাশি সময়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে একাধিক ক্রিকেটারের। জাতীয় দলে বর্তমানে সিলেটের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন আরও তিন পেসার। আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী, এবাদত হোসেন এবং খালেদ আহমেদ। তিনজনেই জাতীয় দলের সাদা পোশাকের নিয়মিত মুখ।
এদিকে রেজাউর রহমান রাজা পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের স্কোয়াডে ছিলেন। যদিও জায়গা হয়নি একাদশে। ঢাকা টেস্টে অবশ্য স্কোয়াডে ছিলেন না তিনি। তবে নির্বাচকদের ভাবনায় তিনি রয়েছেন। আর পাইপলাইনে আছেন তানজিম হাসান সাকিব। অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ইতোমধ্যে অভিষেক হয়েছে। রয়েছেন বিসিবির বিবেচনার তালিকায়। এছাড়া মৌলভীবাজারের ছেলে রুয়েল মিয়াও আছেন পাইপলাইনে।
বর্তমানে জাতীয় ক্রিকেট দলে সিলেটের চার পেসার রয়েছেন। এখন পর্যন্ত সিলেট থেকে ৮ জন পেসার পেয়েছে জাতীয় দল। দেশের ক্রিকেটে সিলেটের পেসারদের এই বিপ্লবে বিস্ময় প্রকাশ করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকেই। প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে সিলেট থেকে পেসার উঠে আসার কথা সাবেক তারকারা বললেও স্থানীয় কোচরা বলছেন অন্য কথা।
এত পেসার সিলেট থেকে উঠে আসার কারণ জানতে চাইলে সাবেক ক্রিকেটার ও সিলেট জেলা দলের কোচ মোহাম্মদ রানা মিয়া বলেন, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হওয়ার আগে নাম ছিল বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামের সব উইকেটই পেস সহায়ক। উইকেট ছিল বেশ বাউন্সি। তাই দীর্ঘ কয়েকবছর এখানে খেলার কারণে পেসাররা প্রস্তুতির একটা ভালো মঞ্চ পেয়েছিল। ফলে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন পেসার সিলেট থেকে উঠে এসেছেন।
তবে অনুসরণও একটা বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ১৯৮৬ সাল থেকে সুরু ভাইয়ের হাত ধরে জাতীয় দলে সিলেটি পেসাররা প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। একে অন্যকে অনুসরণও করে আসাতেও পেসার উঠে আসছে সিলেট থেকে।
তবে স্থানীয় একাডেমি কোচ রিংকু সরকার দিলেন ভিন্ন তথ্য। এখানকার বেশিরভাগ প্রস্তুতি উইকেট সিমেন্টের ও ইনডোরে অনুশীলন হয় বলেই পেসার বেশি পাওয়া যাচ্ছে এই অঞ্চল থেকে। রিংকু সরকার বলেন, নানা সংকট ও প্রতিকূলতার মধ্যেও সিলেটে ক্রিকেট একাডেমি গড়ে উঠেছে। এসব একাডেমির নিজস্ব মাঠ নেই। তাই সিমেন্টের তৈরি উইকেটে ও ইনডোরে অনুশীলন করাতে হয়। ফলে এখানে পেসাররা সুবিধা নিতে পারেন বেশি। কারণ পেসারদের জন্য লম্বা রান-আপের প্রয়োজন হয়। এসব জায়গায় সেই সুযোগ পাওয়া যায়। তবে প্রকৃতি প্রদত্ত প্রতিভা তো কিছুটা থাকতেই হয়।
বিভাগীয় স্টেডিয়ামের আগে সব খেলা হত সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে। সেখানে ক্লাবগুলো দল সাজাত একজন পেসার নিয়ে। এই মাঠে সবধরণের খেলা হওয়াতে অস্থায়ী উইকেটে একেক সময় একেক চিত্র ফুটে উঠত। তবে বেশিরভাগ সময় এ মাঠের উইকেটে স্পিনাররাই সফল হতেন। তবুও তাপশ বৈশ্য ও নাজমুল হোসেনের মতো পেসার উঠে এসেছেন।
তবে দেশের ক্রিকেটে পেস বিপ্লবের পেছনে সিলেটের ভৌগোলিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন দীর্ঘদিন সিলেট বিভাগীয় দলের দায়িত্বে থাকা ও বর্তমানে জাতীয় প্রমিলা ক্রিকেট দলের কোচ এ কে এম মাহমুদ ইমন। সিলেট মিররের সঙ্গে আলাপকালে ইমন বলেন, ‘সিলেটের আবহাওয়া ক্রীড়াবিদদের জন্য আদর্শ। চা বাগান বেস্টিত সিলেট অঞ্চলে অসংখ্য টিলা থাকায় এখানকার পেসারদের রানিং দক্ষতা বেশি। ভৌগোলিক এই সুবিধার কারণে সিলেটের বেশিরভাগ পেসাররাই সহজাত প্রতিভাবান হয়ে থাকেন। পরে তাদেরকে পরিচর্যা করা হয়।
একই কারণ মনে করেন সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্টের সময় সিলেটে এসে জানিয়েছিলেন দেশের ক্রিকেটে আশা দেখাচ্ছেন এখান থেকে উঠে আসা পেসাররা। সম্প্রতি বিসিএলের একদিনের ক্রিকেটের টুর্নামেন্টে সিলেটে এসেছিলেন তিনি। এসময় মুখোমুখি হলে বলেন, ভৌগোলিক কারণে সিলেট থেকে পেসার উঠে আসছে। যা দেশের ক্রিকেটে আশা দেখাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে দেশে পেস বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করি।
আরসি-০১