খাবার লবণে 'মাইক্রো প্লাস্টিক' পেল শাবিপ্রবির গবেষকরা

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি


ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
০৩:০৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
০৩:২৫ পূর্বাহ্ন



খাবার লবণে 'মাইক্রো প্লাস্টিক' পেল শাবিপ্রবির গবেষকরা

দেশের প্রথম সারির কয়েকটি ব্র্যান্ডের খাবার লবণ নিয়ে গবেষণা করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর 'মাইক্রো প্লাস্টিক’ এর সন্ধান পেয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক দল গবেষক।

আজ বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন গবেষণাটির তত্বাবধায়ক ও শাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জি এম রবিউল ইসলাম।

গবেষণায় তিন সদস্যের মধ্যে অন্যান্যরা হলেন, এফইটি বিভাগের প্রভাষক জাহিদ হাসান সৌরভ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আমজাদ পাটোয়ারি।

গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক জিএম রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সম্প্রতি খাবার লবণ নিয়ে একটি গবেষণা করি। গবেষণার পর এতে আমরা ‘মাইক্রো প্লাস্টিকের’ সন্ধান পাই। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‌‌‘I‌nternational conference on Environment' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মলেনে 'Health Rix category' তে (হেল্থ রিস্ক ক্যাটাগরি) আমাদের গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করি। এতে আমরা পুরস্কৃত হই।


আরেক গবেষক জাহিদ হাসান সৌরভ বলেন, আমরা গত বছরের শুরুর দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের দুটি খাবার লবণ নিয়ে গবেষণা শুরু করি। প্রায় এক বছর গবেষণা শেষে আমরা গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে এটি উপস্থাপন করলে আমাদের গবেষণাটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই গবেষণায় 'খাবার লবনে মাইক্রো প্লাস্টিক' গবেষনাটি উপস্থাপন করায় কর্তৃপক্ষ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। গবেষণার স্বীকৃতিস্বরুপ "Best Speaker Award " লাভ করেছে বলেও জানান তিনি।


'মাইক্রো প্লাস্টিকের’ ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক টুথপেস্ট, ক্রিম থেকে শুরু করে নিত্য অনেক পণ্যের মধ্যে ব্যবহার হয়। এটি পানির সাথে মিশে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে ক্যান্সার, কার্ডিওলজি ডিজেস্টসহ মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।’

তিনি বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারনেই মুলত আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে (Food chain) ধীরে ধীরে এসব প্লস্টিক ঢুকে পড়ছে। এর ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া মাইক্রো প্লাস্টিক পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি উপাদান।

গবেষণার সার্বিক বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান জিএম বরিউল ইসলাম বলেন, দুই ধরনের খাবার লবণের মধ্যে Micro FTIR analysis  এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ডাটা থেকে দেখা যায়, Salt-1 নমুনায় প্রায় ৮৮% ও Salt-2 নমুনায় প্রায় ৯০% অতিক্ষুদ্র কণাই বিভিন্ন ধরনের মাইক্রো প্লাস্টিক। উভয় নমুনায়ই বিভিন্ন প্রকারের প্লাস্টিকের মধ্যে পলি এমাইড (ploz amaide) সর্বোচ্চ পরিমানে পাওয়া যায়।


তিনি বলেন, দেশে গত ১০ বছরে প্লাস্টিক ব্যাবহারের পরিমান প্রায় 'Per Capita'  হিসেবে ২ কেজি থেকে বেড়ে সাড়ে ৩ কেজি হয়েছে। কিন্তু এসব প্লাস্টিক বর্জ্য যথাযত ভাবে নির্গত করা হয় না বিধায় এর ফলাফলে ক্ষতিকর প্লাস্টিক সামুদ্রিক উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবারে পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি মুলত গার্মেন্টস ও ইলেকট্রিকস বর্জ্যই আমাদের দেশের ploz amide  এর জন্য দায়ী, শিল্প বর্জ্যরে পাশাপাশি গৃহস্থলীর সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবী। অন্যথায় দেশের তথা সমগ্র দক্ষিন এশিয়ার অফার সম্ভাবনাময় ব্লু-ইকোনমি খাত (Blue Economz Sector) বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

এদিকে এই গবেষণার জন্য গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে Best Speaker Award  লাভ করেছে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের সদস্য ও এফইটি বিভাগে স্নাতককোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আমজাদ পাটোয়ারি।

এইচএন/আরসি-২০