বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার সময় এসেছে

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
০৮:৩১ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
০৮:৩১ অপরাহ্ন



বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার সময় এসেছে
সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেসের উদ্বোধনে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি  জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, সমাজ ও রাজনীতিতে বিকল্প বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির সংগ্রামী ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা আজ জরুরি কর্তব্য। আজ সময় এসেছে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার কাজটিকে সুনির্দিষ্টভাবে ও গুরুত্বের সঙ্গে হাতে নেওয়ার।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ঐতিহাসিক দ্বাদশ কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। আজ শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় গুলিস্তান মহানগর নাট্য মঞ্চে কংগ্রেস শুরু হয়।  

এসময় তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা আজ জনসমর্থন হারিয়েছে। অথচ গোষ্ঠীগত লুটপাটের স্বার্থে এবং কৃত অপরাধের বিচার থেকে রেহাই পেতে তারা জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। জনসমর্থনের বদলে, এমনকি দলীয় রাজনৈতিক শক্তির ওপর নির্ভর করার বদলে, প্রধানত আমলাতন্ত্রসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবলম্বন করে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা স্থাপন করেছে।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুন জারী করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। গুম, খুন, জেল, জুলুমের সন্ত্রাসী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশে এখন ‘ভয় ও লোভের’ রাজত্ব চলছে।

কমরেড সেলিম বলেন, সামরিক কর্তৃত্বকে রক্ত দিয়ে প্রতিহত করে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলাম। গণতন্ত্রকে আজ হরণ করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনকে আজ প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের সামনে এখন চারটি প্রধান বিপদ। সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা।

কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান, কমরেড সহিদুল্লাহ চৌধুরী, কমরেড শাহাদাত হোসেন, কমরেড নুরুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান কমরেড লক্ষী চক্রবর্তী।

কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিশেনে সিপিবি’র উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান বলেন, ভোটাধিকারের  সংগ্রাম করেই আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। ২০০৮-এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। তাদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ দুর্নীতি জন্ম দিয়েছে। উপর থেকে নিচে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। গোটা সমাজ ব্যবস্থায় দুর্নীতির ঘুণে ধরেছে। ভোটের আগের রাতেই বাক্স ভরে আওয়ামী লীগ নিজেদের ভরাডুবি ডেকে এনেছে। ভুয়া ভোটে নির্বাচিতরা দেশ শাসনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এই সংকট মোকাবেলা করতে হলে সর্বপ্রথম ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই লক্ষে কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থি এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি অতীতের মতো এই সংগ্রামকে কাজে লাগাতে না পারে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র সুনিশ্চিত করেই আমরা বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যেতে পারব। তিনি বলেন, কংগ্রেসে সেই পথেই অগ্রসর হতে হবে।

কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিশেনে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ক্ষমতাসীনদের মতই  সরকারের বাইরে যে বুর্জোয়া দল রয়েছে তারাও একই বাজারসর্বস্ব পুঁজিবাদী পথ এবং লুটপাটতন্ত্রের নীতির অনুসারী। উপরন্তু তারা মৌলবাদী দল জামায়াতের সঙ্গে গঁাঁটছড়া বেঁধেছে এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে রাজনীতিকে কলুষিত করছে। তিনি দুই বড় বুর্জোয়া দলকে প্রত্যাখ্যান কওে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বিকল্প গড়ে তুলবে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত ও দেশপ্রেমিক মানুষের স্বার্থের অনুকূলে বিকল্প রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। বহু সংগ্রামের ঐতিহ্যে ভরপুর, সংগ্রামে-ত্যাগে মহীয়ান দেশের প্রাচীনতম পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আজকের এই যুগসন্ধিক্ষণে সেই বিকল্পের ডাক দিচ্ছে।

সারাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে কংগ্রেসের  উদ্বোধনী সমাবেশে জাতীয় পতাকা ও কাস্তে-হাতুড়ি খচিত পার্টির লাল পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কংগ্রেসের উদ্বোধন ঘোষিত হয়। পার্টির সভাপতি জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম যথাক্রমে জাতীয় পতাকা ও পার্টির পতাকা উত্তোলন করেন।

উদ্বোধনী সমাবেশের পর বিকাল ৩টায় গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) সাংগঠনিক অধিবেশন শুরু হয়েছে, যা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত। কংগ্রেসে গত পাঁচ বছরের কর্মকান্ডের উপর ‘কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্ট’, পার্টির রণকৌশলগত দলিল অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রণীত খসড়া ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’ ওপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসের শেষ অধিবেশনে আগামী ৪ বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশন নির্বাচন করা হবে এবং জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করা হবে।

কংগ্রেস চলাকালে প্রতিদিন বিকেল চারটায় গণমাধ্যম কেন্দ্রে মুখপাত্রগণ সংবাদ ব্রিফিং করবেন। কংগ্রেস চলাকালীন প্রত্যেকদিন সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা অংশ নেবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

আরসি-১০