রেলের সেই টিটিই মুখ খুললেন

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ০৮, ২০২২
০৯:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ০৮, ২০২২
০৯:১০ অপরাহ্ন



রেলের সেই টিটিই মুখ খুললেন

টিটিই শফিকুলকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। সেই সঙ্গে পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

আজ রবিবার (৮ মে) দুপুরে রেল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ তথ্য জানান রেলমন্ত্রী।

এদিকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রেলওয়ের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম।

আজ দুপুরে পাবনার পাকশীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

শফিকুল বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। যেহেতু আমি রেলওয়ের জন্য কাজ করি, দেশের জন্য কাজ করি, আমাকে আবার কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়েছে, তাতে আমি খুশি।’

পাকশী রেলের টিটিই শফিকুল ইসলাম হীনম্মন্যতায় ভোগেন বলে ডিসিও নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন। এর জবাবে তিনি বলেন, এটি ঠিক নয়। চাকরিতে তার সন্তুষ্টি আছে। তার প্রমাণ হিসেবে বলেন, 'চাকরির প্রথম দিনই ৭৮ হাজার ৪৩৬ টাকা রাজস্ব জমা দিতে পেরেছিলাম। আমার সহকর্মীরা জানেন, আল্লাহপাকও জানেন, আমি মানসিক বিকারগ্রস্ত কি না!'

টিটিই শফিকুল ইসলাম মাদকাসক্ত বলে মন্তব্য করেন পাকশী রেল বিভাগের ডিসিও (বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা) নাসির উদ্দিন। তার এই মন্তব্যের জবাবে শফিকুল বলেছেন, 'আমি মাদকসেবন তো দূরের কথা, বিড়ি-সিগারেটও খাই না। এমনকি চা স্টলে চা-ও খাই না। '

শফিকুল ইসলাম জানান, তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অফিশিয়াল চিঠি পেলেই কাজে যোগ দেবেন।

রেলওয়ে সূত্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়েন। টিকিট ছাড়াই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরায় বসেছিলেন তারা। টিটিই টিকিট চাইলে তারা সুলভ কামরার তিনটি টিকিট দিতে বলেন। একই সঙ্গে এসি কামরা খালি থাকায় সেখানে বসে ভ্রমণ করতে চান।

টিটিই তাদের জরিমানা ও সুলভের ভাড়া বাবদ মোট এক হাজার ৫০ টাকা নিয়ে এসি কামরা ছাড়তে বলেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর তারা এসি কামরা ছেড়ে শোভন কামরায়ই ঢাকায় পৌঁছেন। কিছুক্ষণ পরই মুঠোফোনে টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানানো হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঘটনা তদন্তে গতকাল শনিবার পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয় পরিচয়’ দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় গত ৪ মে রাতে ঈশ্বরদী থেকে ঢাকাগামী আন্ত নগর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’-এর তিন যাত্রীকে জরিমানা করেছিলেন টিটিই শফিকুল। কিন্তু রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেল কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা। পরিপ্রেক্ষিতে শফিকুলের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

তদন্ত কমিটির ডাকে আজ পাকশীতে এসে টিটিই শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি কখনো কোনো যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করি নাই। আমি সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশে ওই তিন যাত্রীর টিকিট করিয়ে দিয়েছিলাম।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মাদকাসক্ত তো দূরের কথা, আমি কখনো চায়ের নেশাও করি নাই। প্রয়োজনে আমি ডোপ টেস্ট করতে প্রস্তুত আছি। কে বা কারা এটা ছড়িয়েছে আমি জানি না।'

এ সময় রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম বলেন, কর্তব্যরত টিটিইকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করতে আরও দুই দিন সময় বাড়ানো হবে।

এ সময় তিনি আরো বলেন, একই সঙ্গে পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যদি শফিকুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়ে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এএফ/০৫