স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা সব বন্দরে

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ২২, ২০২২
০১:৫৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২২, ২০২২
০২:০১ পূর্বাহ্ন



স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা সব বন্দরে

অন্তত ১২টি দেশে ছড়িয়ে পড়া নতুন ভাইরাস ‘মাঙ্কিপক্স’ নিয়ে উদ্বিগ্ন সারাবিশ্ব। এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি বন্দরে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

শনিবার (২১ মে) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, এয়ারপোর্ট, ল্যান্ড পোর্টসহ সমস্ত পোস্টগুলোকে আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। সন্দেহভাজন কেউ এলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায় এবং অতিদ্রুত যেন তাকে সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নাজমুল ইসলাম বলেন, মাঙ্কিপক্স নিয়ে আমাদের এতো আতঙ্কিত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ভাইরাসটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সারাবিশ্ব থেকেই তথ্য-উপাত্ত নেব এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটি আমরা নেব।

জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনদের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে অধিদপ্তরের এ পরিচালক বলেন, আমরা যখন কোনো নির্দেশনা দিই, তখন সেটি জেলা সিভিল সার্জন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়েই সেটি চলে যায়। সব জেলায় তো ল্যান্ড পোর্ট নেই। যেসব জেলায় আছে সেগুলোতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কারণ, ভাইরাসটি তো মূলত বন্দর দিয়ে আসে, তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের ঘটনা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ভাইরাল সংক্রমণজনিত রোগটি পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকায় সাধারণত সবচেয়ে বেশি দেখা গেলেও এবার সেই গণ্ডি পেরিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৮০ জনের মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ১১টি দেশে আরও ৫০ জনের এই ভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা তদন্তাধীন রয়েছে।


মাঙ্কিপক্স নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও স্বল্প পরিচিত রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার উষ্ণ ও আদ্র বনাঞ্চলের বানররা ছিল এ রোগের প্রথম শিকার। তারপর একসময় মানবদেহেও সংক্রমিত হওয়া শুরু করে রোগটি।

মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাসজনিত অসুখ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দু’টি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে— মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান।

রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপাশি শরীরে দেখা দেয় ফোস্কা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি ওঠে। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালুতে।

১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১ দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের পর নাইজেরিয়ায় এবার সবচেয়ে বেশি এ রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। দেশটিতে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের দেহে উপসর্গ দেখা গেলেও ১৫ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

গত ৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয় নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়া থেকে ওই ব্যক্তি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন। এরপর থেকে আফ্রিকার বাইরে ১০০ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড একাডেমিক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চলমান প্রাদুর্ভাবে এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স শনাক্তের ঘটনাগুলো কিছুটা অস্বাভাবিক। যেসব দেশে ভাইরাস নিয়মিত ছড়িয়ে পড়ে না, সেসব দেশে বর্তমানে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। বর্তমানে শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসের উত্স এবং এর রূপ বদল ঘটেছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

মাঙ্কিপক্সে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং পর্তুগালেই বেশিরভাগ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তবে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতেও সংক্রমণ ঘটেছে এবং বোস্টনেও মাঙ্কিপক্সে একজনের সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

মাঙ্কিপক্স রোগের জন্য এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তবে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, স্মলপক্স বা গুটিবসন্তে জন্য ব্যবহৃত টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর।  সূত্র : ঢাকাপোস্ট


এএফ/০১