নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ১১, ২০২২
০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ১১, ২০২২
০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্মৃতিচারণা করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে তিনি সব সময় দেশকে নিয়ে ভাবতেন। সবার জন্য চিন্তা করতেন। একই মন্ত্রণালয়ে তাঁর অধীনে কাজ করার সময় খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাঁর মতো কর্মমুখর ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন আরেকজন খুঁজে পাওয়া কঠিন।
আলোকিত সিলেটের স্বপ্নদ্রষ্টা সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে স্মরণ ও তাঁর কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেছেন বক্তারা।
![]()
শুক্রবার বিকেলে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগ’-এর ব্যানারে এ স্মরণ সভার আয়োজন করেন সিলেটের বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বশীল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মূল আলোচক ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোটভাই, সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
স্মরণ সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমি তাঁর অধীনে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সেজন্য আমি সৌভাগ্যবান। আমাদের সমাজে আঞ্চলিকতার বিষয়টি থাকলেও আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন তা থেকে মুক্ত। তিনি দেশের প্রতিটি এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। যা আমাদের জন্য বড় শিক্ষা।’
আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোটভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ তৈরিতে কয়েকজন মানুষের মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন একজন। তিনি আজীবন মানুষের জন্য ভেবে গেছেন। সেই ভাবনা অনুযায়ী মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তার জীবনের আদর্শ ছিল সততা ও আন্তরিকতা। আমরা সেই আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
![]()
সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগের সদস্যসচিব আহমেদ নূরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার আরশ আলী। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও শিক্ষাবিদ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। এরপর সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তাঁর বোন ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, ছোটবোন শিপা হাফিজ।
![]()
বড় ভাইকে নিয়ে স্মৃতিচারণে মুহিতের ছোট বোন শিপা হাফিজ বলেন, ‘বিগত কয়েক মাস ধরে মুহিত ভাই আমাদের সবাইকে বলছিলেন এপ্রিলে মাসে সিলেট যাবে আব্বার জন্মদিন। তোমরা আমার সব ভাইবোন আমার সঙ্গে যাবে। আমরা তাঁকে বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম আব্বার জন্মদিন তো জুন মাসে। এপ্রিলে নয়। কিন্তু তিনি কখনো সেটা শুনেননি। কিন্তু আমরা এপ্রিল মাসেই তাঁর সঙ্গে সিলেট আসলাম, তার মরদেহ নিয়ে। আবার জুন মাসে আজকে আবার সিলেট আসলাম, তাঁর স্মরণ সভায়।’ মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধতার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘মুহিত ভাই যখন মন্ত্রীত্ব থেকে বিদায় নিলেন। তার ক্ষমতা যখন আর নাই তখনও দেখেছি মানুষ তার কাছে এসে ভিড় করেছেন। তার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায় তিনি মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছিলেন।’ সিলেটে এমন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ এখানে এসে আবার বুঝলাম সিলেটের মানুষ তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।’
এর আগে শুরুতে মুহিতের জীবন ও কর্ম নিয়ে গোবিন্দ রায় সুমন নির্মিত ২০ মিনিট ব্যপ্তির তথ্যচিত্র ‘লিজেন্ড’ প্রদর্শিত হয়। এরপর তাঁর জীবনী পাঠ করেন অধ্যাপক শামীমা চৌধুরী। পরে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে এই গুণী ব্যক্তিকে স্মরণ করা হয়। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রানা কুমার সিনহার শোক সংগীতের মাধ্যমে মূলপর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়।
![]()
বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহজনেওয়াজ মিলাদ, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জাসদ সিলেটে জেলা সভাপতি লোকমান আহমদ, লেখক ও চিকিৎসক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটি বড় গুণ ছিল তিনি খুব ভালো শ্রোতা ছিলেন। এত প্রজ্ঞার অধিকারী হয়েও তিনি অন্যের কথা গভীর মনযোগ দিয়ে শুনতেন। যা এখন মানুষের মধ্যে তেমন একটা দেখা যায় না।’ মুহিতের কর্মময় জীবনের কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ‘তিনি তার দীর্ঘ বর্ণময় জীবনের নানা ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে দিনরাত কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নানামুখি প্রচেষ্টা ও কাজের কারণে তিনি তখন ৪ ঘন্টার বেশি ঘুমাতেন না। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীসময়ে দেশের অগ্রযাত্রীয় নানাভাবে ভূমিকা রেখেছেন। সবচেয়ে বেশি বাজেটের প্রণেতা যেমন তিনি তেমনি বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন শুরু হয়েছে তার মতো কয়েকজনের হাতে।’
![]()
এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. জয়নাল আবদীন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মাওলানা খায়রুল হোসেন, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের সেক্রেটারী আব্দুর রহমান জামিল, সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক প্রমুখ।
এর আগে সকাল সাড়ে এগারোটায় সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দ নগরের শিবগঞ্জে আবুল মাল আবদুল মুহিতের কবর জিয়ারতে যান। এসময় দোয়া ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।