জনতার কামরান থাকবেন মানুষের মণিকোঠায়

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ১৬, ২০২২
০২:০৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১৬, ২০২২
০২:০৪ পূর্বাহ্ন



জনতার কামরান থাকবেন মানুষের মণিকোঠায়
সিলেটে স্মরণসভায় বক্তারা

জনতার কামরান চিরদিন মানুষের মণিকোঠায় থাকবেন বলে মন্তব্য করে স্মরণ করেছে সামাজিক সংগঠন সিলেট বিবেক।

সিলেটে স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, ‘বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছিলেন। সে জন্য তিনি সিলেটের জনতার কামরান হয়ে উঠেছিলেন। এখন তিনি আমাদের চোখের সামনে নেই। কিন্তু জনতার কামরান চিরদিন থাকবেন জনতার মণিকোঠায়।’ 

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় নগরের বন্দরবাজারস্থ ব্রহ্মমন্দিরে সিলেট বিবেক ও সিংহ বাড়ির উদ্যেগে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। 

সিলেট বিবেকের সভাপতি জ্যোতির্ময় সিংহ চন্দনের সভাপতিত্বে ও শ্রæতি সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্তের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, লোকগবেষক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিলেট রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ মহারাজ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ, দৈনিক সিলেট মিরর-এর সম্পাদক আহমেদ নূর ও সিলেট বিবেকের প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস।

স্মরণসভার শুরুতে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান স্মরণে দাড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

স্বাগত বক্তব্য দেন, সিলেট বিবেকের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কৃষ্ণপদ সূত্রধর। তিনি বলেন, ‘সিলেট মিরর পত্রিকায় বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর দিন প্রকাশিত ফিচার দেখেই তাৎক্ষণিকভাবে এই শোকসভা আয়োজন করা হয়েছে।’ স্মরণসভায় শোকসংগীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রানা কুমার সিংহ, শাপলা শালুক ও সুস্মিতা চৌধুরী শাওন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, ‘কামরান নগরের দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের যতটা কাছাকাছি ছিলেন, তেমনি বণিক সমিতিরও কাছাকাছি ছিলেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি জীবন পরিচালিত করেছেন। এরকম নেতা আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য বারবার প্রয়োজন। তার ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, জনপ্রতিনিধি জীবনের কথাগুলো নিয়ে আমাদের একটি সংকলন তৈরি করতে হবে। যার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে জনতার কামরানকে নিয়ে যেতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক সঙ্কটে যখনই তাকে চেয়েছি, আমরা পেয়েছি। মানুষের জন্য অকাতরে কাজ করা সেই গুণটি তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ বলেন, ‘তাকে যখন স্মরণ করা হয় না, তখন আমার কষ্ট লাগে। তাকে অনেক বড় পরিসরে স্মরণ করা প্রয়োজন। কারণ তিনি ছিলেন আমাদের সবার আপনজন। সবার সুখে, দুঃখে তাকে আমরা পেয়েছি।’

সিলেট মিরর সম্পাদক আহমেদ নূর বলেন, ‘বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন সাধারণ মানুষের কামরান, সংস্কৃতির কামরান, সিলেটের কামরান। কিন্তু দুঃখ হয় তার মৃত্যুর দুই বছর পরও সিলেটের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে কেউই যখন তাকে স্মরণ করছি না।’ এ সময় তিনি সিলেটের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে স্মরণসভা আয়োজনের আশা প্রকাশ করেন। 

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা পান্নালাল রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দেব, শিশু সংগঠক সন্তু চৌধুরী, কবি ও সাহিত্যিক মুহিবুর রহমান কিরন, নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, সম্মিলিত নাট্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, কবি পুলিন রায়, প্রদীপ কুমার দে, সুরমা খেলাঘর আসরের ধ্রুব গৌতম, শ্রুতি সিলেটের সুকান্ত গুপ্ত, কবি আবিদ ফয়সাল, অরুপ কুমার বিশ্বাস, নিরঞ্জন চন্দ্র প্রমুখ। 

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘কামরানকে হারিয়ে যেন আমরা অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি। তিনি মানুষের এত কাছাকাছি ছিলেন, মনে হত যেনো পুরো নগরবাসী তার আত্মার আত্মীয়। সিলেটের সব মানুষের জন্য তার দরজা ছিল সব সময় খোলা। কারো বিপদের খবর পেলেই তিনি ছুটে এসেছেন। দুঃখের বিষয় দুই বছরেও তাকে বৃহৎ পরিসরে আমরা স্মরণ করতে পারিনি। তিনি অনেক নেতার শোকসভার সভাপতি থাকলেও তাকে নিয়ে কেউ একটিও স্মরণসভা করেননি।’

সভাপতির বক্তব্যে জ্যোতির্ময় সিংহ চন্দন বলেন, ‘আমরা বড় অকৃতজ্ঞ জাতি। তা না হলে কামরান ভাইয়ের মতো মানুষের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের কোনো আয়োজন থাকে না। আজ সকালে সিলেট মিরর পত্রিকায় আহমেদ নূরের লেখা দেখে নিজের বিবেকের তাড়নায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই স্মরণসভা আয়োজন করেছি। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন সত্যিকারের নগর পিতা। তিনি সিলেট নগরের সর্বস্তরের মানুষের অভিভাবক ছিলেন, বন্ধু ছিলেন, সহযাত্রী ছিলেন। তাকে স্মরণ করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।’

এনএইচ/আরসি-০১