নাবিল হোসেন
জুলাই ০৫, ২০২২
০৭:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৫, ২০২২
০৭:৪৯ অপরাহ্ন
সিলেটজুড়ে লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে মানুষ। প্রচন্ড তাপদাহ ও গরমের কারণে এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে; এর মধ্যে সিলেটজুড়ে লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে না। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহও কমেছে। যার কারণে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে সিলেট।
নগরবাসী জানিয়েছেন, গত দুই দিন ধরে সিলেটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে উঠেছে। কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ যায় আর আসে। প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ যায়। প্রতিবার প্রায় আধাঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। নগরের নয়াসড়ক, কাজীটুলা, দাড়িয়াপাড়া, মদিনা মার্কেট, কুমারপাড়া, জালালাবাদ, আগপাড়া, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, উপশহর, আম্বরখানাসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নগর ছাড়াও সিলেটের উপজেলাগুলোতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এর আগে বন্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করায় ও নগরের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল নগরজুড়ে। তবে পানি কমতে থাকায় স্বাভাবিক হতে থাকে এ পরিস্থিতি। এরমধ্যেই নতুন ভোগান্তিতে পড়েছেন সিলেটবাসী।
নয়াসড়ক এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘দিনরাতে কতবার যে বিদ্যুৎ যায় তার হিসেব নেই। এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরম পড়েছে। এর মধ্যে হচ্ছে লোডশেডিং। গরমে সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। বাসায় অসুস্থ মানুষের কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ।’
দাড়িয়াপাড়া এলাকার শাহিনূর আক্তার বলেন, ‘দিনরাতে ৬ থেকে ৭ বার বিদ্যুৎ যায় আসে। প্রচন্ড গরমের দিনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট আমাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলছে। গরমে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।’
নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা নুরুন নাহার বলেন, ‘বার বার বিদ্যুৎ যাওয়া আসার কারণে আমার বাসায় পানির মটর নষ্ট হয়ে গেছে। এমনিতেই বন্যায় দুর্ভোগে ছিলাম। এখন আবার নতুন দুর্ভোগে পড়তে হলো।’
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমেছে। সিলেটের গ্রিডের আওতাধীন এলাকায় পিক-আওয়ারে প্রতিদিন ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি)। বর্তমানে ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। ফলে ২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। যার কারণে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে অন্য এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, গত এপ্রিলে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট। এ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছিল সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট।
সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির সিলেট মিররকে বলেন, ‘দুই দিন ধরে সিলেটে লোডশেডিং হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে।’
সিলেট গ্রিড উপকেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মসনুল আলম সিলেট মিররকে বলেন, ‘গ্যাসের প্রেশার লো থাকায় বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো চলছে না। যার কারণে বিদ্যুতের ফ্রিকুয়েন্সি ডাউন হয়ে যাচ্ছে। এতে করে সিলেট গ্রিডে পিক আওয়ারে ২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে পিক আওয়ারে সিলেট গ্রিডে ১৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত দেওয়া হত সেখানে এখন ১২৫ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে এ সমস্যা শুধু সিলেটে নয়। সারাদেশেই হচ্ছে।’
কবে নাগাদ এ সমস্যা থেকে উত্তরন পাওয়া যেতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে এখনও কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। আশা করছি খুব বেশিদিন এ সমস্যা চলবে না।’
এএফ/০৩