বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে শিগগির মিলছে না মুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ০৫, ২০২২
০৮:৩০ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৫, ২০২২
০৮:৩৭ অপরাহ্ন



বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে শিগগির মিলছে না মুক্তি
# এলএনজি আমদানি বন্ধে কমেছে গ্যাস সরবরাহ # কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল সিলেটবাসী। তাপদাহের মধ্যে লোডশেডিংয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় খুব শিগগিরই এ সমস্যা থেকে মুক্তির কোনো আশা নেই। 

সরকারের সাশ্রয় নীতিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চ দরের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি বর্তমান বন্ধ থাকায় কমেছে গ্যাস সরবরাহ। ফলে কমেছে বিদ্যুতের উৎপাদন। এ অবস্থায় সারাদেশেই বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে। 

জানা গেছে, গত ২৯ জুন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল ৩ হাজার ১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। তাতে আমদানি করা গ্যাস অর্থাৎ এলএনজি ছিল ৮৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর থেকে প্রতিদিনই গ্যাস সরবরাহ একটু একটু করে কমানো হয়েছে। গতকাল সোমবার গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ২ হাজার ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে এলএনজি ৫০৭ মিলিয়ন ঘনফুট। 

পেট্রোবাংলা বলছে, সোমবার দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু ২৯ জুন ছিল ১ হাজার ৮১ মিলিয়ন ঘনফুট। এই দুই দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ কমাতে দেখা গেছে। এই গ্যাস-রেশনিংয়ের ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে। 

জানা গেছে, পিডিবির ১৫২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তবে ক্যাপটিভসহ মোট উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো। এরমধ্যে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫১ শতাংশ, তেলভিত্তিক এইচএফও ও এইচডিও কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩৪ শতাংশ। কয়লা থেকে প্রায় ৮ শতাংশ, আমদানি থেকে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে। বাকিটা পূরণ করে সৌর ও পানিভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হলে তেল বা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হতো। এবার তা হতে দেখা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিকে। যদিও সরকারি সূত্রগুলোর দাবি, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেখান থেকে কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এলএনজির নিয়মিত সরবরাহ চুক্তিতে কাতার এবং ওমান ট্রেডিংয়ের ওপর ভরসা করছে সরকার। 

উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় সারা দেশেই কম-বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এটি ফোর্স লোডশেডিং। অর্থাৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ালে লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন পড়তো না। তারপরও করা হচ্ছে। খোদ রাজধানীতে এতদিন যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল, সেখান থেকেও সরে আসা হয়েছে। এ অবস্থায় জনগণকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের। 

সিলেটে গত শনিবার থেকেই ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট তৈরি হয়। নগরের প্রায় সব এলাকাসহ পুরো জেলাজুড়েই রয়েছে এ সমস্যা। একেক এলাকায় দিনে ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে। একবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে প্রায় আধঘণ্টা পর আসছে বিদ্যুৎ। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে তাপদাহ চলছে। একদিকে প্রচন্ড তাপদাহ আর অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মানুষের অবস্থা শোচনীয়। 

সিলেট গ্রিড সূত্রে জানা গেছে, গরমকালে সিলেটে প্রতিদিন পিক আওয়ারে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। গত রবিবার ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি)। গতকাল সোমবার ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে অন্য এলাকায় দিতে হচ্ছে। 

নগরের মীরবক্সটুলা এলাকার বাসিন্দা সুহেল আহমদ বলেন, ‘এমনিতেই গরমের কারণে অতিষ্ঠ। এর মধ্যে কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চলে যায়। এ অবস্থায় দোকানে বসে ব্যবসা করাই দায় হয়ে উঠেছে।’

পাঠানটুলা এলাকার রাকিব খান বলেন, ‘বাসায় বসে ফ্রিলান্সিংয়ের কাজ করি। কিন্তু এখন একটানা কাজ করা যাচ্ছে না। কারণ একটু পর পর বিদ্যুৎ যায় আর আসে। এভাবে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করলে ইলেকট্রনিক্স পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।’

জেলা বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা তানজিদা সারোয়ার ইরিন বলেন, ‘এই গরমে বিদ্যুতের এই আসা যাওয়া বয়স্ক, রোগী ও শিশুদের কষ্ট কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’

সিলেট গ্রিড উপকেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মসনুল আলম সিলেট মিররকে বলেন, ‘গরমকালে সিলেটে পিক আওয়ারে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। আজ এনএলডিসি থেকে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে ২০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’

এদিকে, গত রবিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় দেওয়া এক পোস্টে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।’

কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।’ 


এ সংক্রান্ত ‍পূর্বের সংবাদ পড়ুন-

গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদন ব্যাহত, সিলেটজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট


এএফ/০৪