শহীদ আহমদ চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ,
জুলাই ০৫, ২০২২
১১:৫৯ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৬, ২০২২
০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
সিলেটে ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রায় তিন সপ্তাহ থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো আছেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু মানুষ। আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকতে যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনি কষ্ট খাবার, ঘুম গোসলসহ শোচাগারের কাজে। এমনটাই জানালেন মির্জাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অনিতা বিশ্বাস।
তার কথায়, ‘পানির ভয়ে আমরা কোনমতে চলে এসেছি বাড়িতে মাল পত্র যা ছিল সব রেখে এসেছি। আজ এতো দিন হয়ে গেলো পানি কমছে না। কেমন আছে ঘরের জিনিস আছে কি নাই তাও বলতে পারছি না।আর কত দিন থাকতে হবে। নিজের ঘরে না খাইয়াও ভালা থাকা যায়। বন্যায় আমরারে ঘরবাড়ি ছাড়া করলো।তিনি আর বলেন পানিয়ে বেড়াড় টিন ভাঙিয়া নিছে । এখন ঘরে ফিরলে আগে ঘর ঠিক করমু না খানি জোগাড় করমু।’ কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েনে তিনি।
এদিকে, ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমছে। পানি সরে যাওয়ায় বন্যার তাণ্ডবের চিহ্ন একে একে বেরিয়ে আসছে। রাস্তা, বসত ঘরের ক্ষত বেরিয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে থাকা জিনিসপত্রের পচন ধরায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একালাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষেরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পানি একটু একটু করে কমতে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় অনেক বানভাসি পরিবার বাড়ি ফিরতে পারছে না। আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ঔষুধের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতা কম থাকায় বন্যা কবলিত মানুষেরর মধ্যে হাহাকার বিরাজ করছে। পানিবন্দি দশা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বন্যা কবলিত মানুষের চোখে-মুখে বাড়ি ফেরার আকুতি থাকলেও বাড়ি ফিরতে পারছে না অনেকই।
ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা করিম উদ্দিন বলেন, ‘নিজের ঘরে খেয়ে না খেয়ে থাকলেও ভালো। এখানে মানবেতর জীবন আর ভালো লাগছে না। না পারছি নিজের ইচ্ছা মতো কোনো খাবার খেতে, না পারছি ভালোমতে ঘুমাতে।
সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইলাশপুর এলাকায় সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে ট্রাক-বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় স্থানীয় পুকুর ও বিলের পানি সড়কের উপর দিয়ে ধীর গতিতে নামছে। সে কারণে সড়কে ভাঙন ও বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল সরজমিনে দেখা যায় কয়েকজন শ্রমিক রাস্তার পূর্বপাশে বালিভরাট করে বস্তা দিয়ে বাধ দেওয়ার চেষ্ঠা করছেন।বেশ স্রোত্রে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এবং সেই সাথে ভারী যানবাহন চলাচলে রাস্তার পুর্বপাশে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বর্তামানে এক পাশ দিয়ে যান চলাচল করছে।এতে রাস্তার দুপাশে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।
সিএনজি চালক সেবুল মিয়া বলেন পানি বাড়ায় আমি গত ৮/১০ দিন এই রাস্তা দিয়ে সিলেটে যাইনি।এখনো পানি রয়েছে তার সাথে বড় ধরনের ভাঙ্গন গাড়ি চালানো এখানে ঝুকি রয়েছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমীন বলেন, ‘ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ৭১ মে:টন চাল, ৭বস্তা শুকনো খাবার,১৪ লক্ক টাকা,বিতরন করা হয়েছে। এছাড়া আর ৩০ মে:টন চাল হাতে মজুদ রয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ২২৫ পরিবারের জন্য ২,২৫০,০০০/হাজার টাকা এসেছে বলে জানান।
এএফ/০৬