পর্যটকে মুখর ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ


অক্টোবর ০৯, ২০২২
০৩:৪১ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০৯, ২০২২
০৪:৩৬ অপরাহ্ন



পর্যটকে মুখর ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

বন্যা-পরবর্তীকালে আবারও পর্যটকমুখর হয়ে উঠেছে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। টানা এক সপ্তাহ ধরে পর্যটকের ঢল নেমেছে এ পর্যটন স্পটে। এতে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠছেন সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। 

গতকাল শনিবার দুপুরে সরজমিনে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসু হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে সাদা পাথরে। ভ্রমনে আসা পর্যটকের ঢলের কারণে সংকট দেখা দেয় সাদা পাথর যাওয়ার বাহন ইঞ্জিন চালিত নৌকার। পর্যটকেরা সিলেট শহর থেকে গাড়ীতে এসে ভোলাগঞ্জ ১০নং নৌকা ঘাট থেকে প্রতি আটজনে একটি নৌকা নিয়ে যেতে হয় সাদা পাথর পর্যটন স্পটে। নৌকা ঘাটে দেখা গেছে প্রচুর মানুষের ভিড়। প্রতি আটজনের একজন লাইনে দাঁড়িয়ে আট শত টাকা দিয়ে নৌকার ভাড়া করছেন। তীব্র গরমের মাঝে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে নৌকার। পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কেউ কেউ ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে নৌকা পেয়েছেন।

সাদা পাথর পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) থেকেই সাদা পাথরে পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু করে। সেটি এখনো অব্যাহত রয়েছে। রবিবার (৯ অক্টোবর) পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে বলে তাদের ধারণা।

এমনিতেই বছরের এ সময় থেকে সাধারণত পর্যটকদের আনাগোনা বাড়া শুরু হলেও এবার বিজয়া দশমীর ছুটি বুধবারে পড়েছে। মাঝখানে বৃহস্পতিবার এক দিন অফিস খোলা থাকলেও পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর রবিবারে থাকবে ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি। অনেকে আবার মাঝখানের বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পাঁচে পাঁচ করে ছুটি কাটাতে ভ্রমণে আসেছেন বলেই বন্যার সময় পর্যটক না আসায় যে ক্ষতি হয়েছে তার কাটিয়ে উঠছে তারা।

নৌকাঘাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষ দানু মিয়া দৈনিক সিলেট  মিরর-কে বলেন, 'টানা এক সাপ্তাহ ধরে সাদা পাথরে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজারের অধিক পর্যটকের আগমণ ঘটেছিল। বন্যার কারণে দুটি ঈদে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরে পর্যটক ছিল একেবারেই কম। সারা বছর আমরা যা আয় করি দুটি ঈদে তার থেকে বেশি আয় হয়। বন্যার কারণে পর্যটক না আসায় পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সবার অনেক ক্ষতি হয়েছে।’

পূজা ও ছুটি মিলিয়ে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সাদাপাথরে হাজার হাজার পর্যটকের আগমণে আমাদের নৌকাগুলোর চাহিদা দুই-তিন গুণ বেড়েছে। এতে আমাদের আয়ও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আমাদের এখানে শতাধিক নৌকা আছে। প্রতিটি নৌকাই এখন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি ট্রিপ দিচ্ছে। দুই বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো সময় যাচ্ছে।’

রংপুর থেকে বাইসাইকেলে সিলেটে ভ্রমণে এসেছেন তিন শিক্ষার্থী তাদের একজন শিথিল আহমদ। তিনি সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘এবার ছুটিটা একটু লম্বা হওয়ায় ছয় জনে মিলে সিলেট এসেছি। তিন জন সিলেটে এসে অন্য কোথায় না গিয়ে বাসে করে রংপুরে চলে গেছে। আমরা তিনজন আজ সাদা পাথর ভ্রমণে এসেছি। কালকে শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার ভ্রমণ শেষে রংপুরে চলে যাবও। সাদা পাথরে এসে খুব ভালো লাগছে তবে প্রচুর পর্যটক থাকায় নৌকা পেতে কষ্ট হয়েছে।

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটন স্পটে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মনির হোসেন ও তারেক আহমদ। পর্যটকদের নিয়ে ছুটে চলাতেই তাঁদের আনন্দ ও আয়-রোজগার। তাঁরা বলেন, ‘বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়ছে। বাড়িঘরও ক্ষতির মুখে পড়েছে। বন্যার সময় পর্যটক না আসায় আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কয়েক দিন ধরে সাদাপাথরে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসছেন। তাই আমাদের আয়ও বেড়েছে। আগামী রবিবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকায় এ কয় দিন ভালো আয় হবে বলে আশা করছি।’

কোম্পানীগঞ্জ ফটোগ্রাফি সোসাইটির সভাপতি মোঃ শরীফ আহমদ সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরে আমাদের প্রায় ৬০ জন ফটোগ্রাফার আছে। তারা সবাই ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করে। সাদাপাথর পর্যটন স্পটে যাঁরা ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁদের অবস্থা প্রায় দুই বছর থেকে খারাপ। তবে কিছুদিন ধরে পর্যটকরা ভিড় করায় তাঁদের আয় সাধারণ সময়ের চেয়ে দুই-তিন গুণও হচ্ছে। একেকজন প্রতিদিন পাঁচ থেকে দেড় হাজার টাকাও আয় করছেন ছবি তুলে।’

ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি আইসি মোঃ শাহাব উদ্দিন সিলেট মিরর-কে বলেন, সরকারি ছুটি থাকায় গত কয়েক দিনে কয়েক লাখ পর্যটকের ঢল নেমেছিল ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ছুটির দিন গুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের একটি টীম পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের আগমণ ঘটলেও পুলিশের নিরাপত্তার কারণে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

আরএম-০১