বিএনপির গণসমাবেশ: মাঠে ক্যাম্প করে অবস্থান নেতা-কর্মীর

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ১৮, ২০২২
০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৮, ২০২২
০৫:২১ পূর্বাহ্ন



বিএনপির গণসমাবেশ: মাঠে ক্যাম্প করে অবস্থান নেতা-কর্মীর

সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি সেই সাথে নগর জুড়ে বাড়ছে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা । কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠ পরিদর্শনের পাশাপাশি জেলা ও মহানগরের নেতার সার্বক্ষনিক অবস্থান করছেন সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। শনিবারের গন সমাবেশকে কেন্দ্র করে সিলেটের ৪ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা গণসমাবেশের দুইদিন আগে সমাবেশস্থল সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীতে মোটরসাইকেল শোডাউন করে ছাত্রলীগ। কয়েকশ’ মোটরসাইকেল নিয়ে তারা পুরো নগরীতে শোডাউন করেন। একপর্যায়ে তারা বিএনপির সমাবেশস্থল সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পার্শ্ববর্তী চৌহাট্টা মোড়ে অবস্থান নেয়। ঘন্টাখানেক তারা সেখানে অবস্থান করে বিএনপি বিরোধী স্লোগান ও বক্তব্য দেয়। এসময় চৌহাট্টা এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অপ্রীতিকর ঘটনারও আশঙ্কা করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে পুলিশও চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে জিন্দাবাজারের দিকে চলে আসেন।

বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায় মঞ্চের ডানপাশেই পর্দা দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ছোট ছোট ঘর। ঘরের উপরে ব্যানারে লেখা রয়েছে 'ক্যাম্প'। এসব ক্যাম্পের ভেতরে চরছে রান্নার আয়োজন।

বিএনপি নেতারা জানান, পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা বাধার কারণে আগেভাগে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নেতাকর্মীরা সিলেটে আসতে শুরু করেছেন। তাদের জন্য এসব ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চল ও অঙ্গসংগঠনগুলোর জন্য আলাদা আলাদা ক্যাম্প করা হয়েছে। এসব ক্যাম্পেই আগে আসা নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাতে আলীয়া মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ক্যাম্পে বড় হাড়িতে চলছে রান্নার আয়োজন।  বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীরা মাঠের চারদিকে ঘুরাঘুরি করছেন। সেচ্ছাসেবক দলের ক্যাম্পে সাউন্ড সিস্টেম লাগিয়ে গান গাইছেন কয়েকজন নেতাকর্মী। 

মাঠের প্র্রবেশ মুখেই বিএনপির লগো ও প্রতিক সম্বলিত ব্যাজ ও কোট পিন নিয়ে বসেছেন দুজন বিক্রেতা। তাদের একজন মামুন খান এসেছেন শরীয়তপুর থেকে। তিনি বলেন, ফরিদপুর, খুলনা ও বরিশালের সমাবেশেও আমি কোট পিন ও ব্যাজ বিক্রি করেছি। কেবল ব্যবসার জন্য না, দলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমি সারাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিক্রিও ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মাঠের ভেতরে নির্মান করা হয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি স্টল। একটি স্টলে স্তুপাকারে রাখা হয়েছে পানির বোতল। মাঠে আসা যে কেউ বিনামূল্যে সেখান থেকে পানি নিয়ে যেতে পারছেন।

গণসমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পুত্রবধূ রেজিনা নাসের ও ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই সমাবেশ স্থলে নেতাকর্মীদের ভিড় লেগে যায় সময় সময় তা বাড়তে থাকে। বিকেলে বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ড. মঈন খানসগহ কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পরিদর্শন করেন। এসময় সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। চলছে মাঠ প্রস্তুত করার শেষ মূহূর্তের কাজ।

সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে ড. মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে যেখানে গণতন্ত্র নেই। তারা এক দলীয় শাসন কায়েম করেছে। অতীতে তারা বাকশাল কায়েম করেছিল। এখন আবারও একই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

সিলেটের সমাবেশকে ‘লাকি সেভেন’ উল্লেখ করে ড. মঈন খান বলেন- ‘আমরা ইতোমধ্যে ৬টি সমাবেশ করেছি। শাহজালালের মাটিতে সপ্তম সমাবেশ হবে। ইনশাল্লাহ এই পবিত্র মাটিতে সমাবেশ সফল করে জনগণ সরকারকে বিদায় বার্তা জানাবে।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, ‘সিলেটে গণসমাবেশের জন্য ৭০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। মঞ্চ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ।

তিনি বলেন, সমাবেশকে পন্ড করতে সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। পরিবহন ধর্মঘটও ডাকা হয়েছে। তাই আগেভাগেই অনেক নেতাকর্মী আসা শুরু করেছেন। তাদের বিশ্রাম ও খাওয়ার জন্য মাঠের মধ্যে ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। একেকটি ক্যাম্পে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন থাকতে পারবেন। তবে শনিবার সমাবেশে আসা মানুষের জায়গা করে দিতে এসব ক্যাম্প ভেঙে ফেলা হবে।

এদিকে বিএনপির এ গনসমাবেশের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই নগর জুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।  দুইদফা দাবিতে গত বুধবার বিএনপির সমাবেশের দিন তথা শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ‘সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি’। দুই দফা দাবিতে ঔইদিন সিলেট জেলায় কোন ধরণের বাস চলাচল করবে না বলে জানিয়েছিলেন পরিবহন মালিকরা। তাদের দাবির মধ্যে ছিল নতুন করে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন না দেওয়া এবং অটোরিকশায় ৩ জনের বেশি যাত্রীবহন না করা ও চালকের আসনের পাশে গ্রিল সংযোজন। তবে বাস ব্যতীত অন্যসব পরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা ওইদিন ছিলেন ধর্মঘটের বিপক্ষে।

কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ চারদফা দাবিতে শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া, লামাকাজি ও শেওলা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ, নতুন সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন প্রদান ও মহাসড়কে টমটম, নছিমন চলাচল বন্ধ। দুদফায় শ্রমিক ও মালিকদের ধর্মঘটের ফলে বিএনপির গণসমাবেশের দিন সবধরণের যান চলাচল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এছাড়া বিএনপির গণসমাবেশ সফলে প্রস্তুতি সভা, সমাবেশ ও প্রচারণাকালে বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পুলিশের সাথে দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতারও হয়েছেন কয়েকজন। সিলেটের ওসমানীনগরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনার গাড়ির সামনের গ্লাস। এছাড়া ওসমানীনগের ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে সমাবেশের আগে আরও ধরপাকড়েরও আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।

তবে এই পরিস্থিতিতেও খুব বেশি শঙ্কিত নন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষনেতারা। পরিবহন ধর্মঘট, হামলা, মামলা ও ধরপাকড়কে তারা সংশ্লিষ্টদের ‘রুটিন ওয়ার্ক’ হিসেবেই দেখছেন। সকল বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সমাবেশের দিন সিলেট নগরী জনসমূদ্রে পরিণত হবে বলে আশাবাদী তারা।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মিজান চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ ডাকার পর জনস্রোত আটকাতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে দেশের যেখানেই সমাবেশ ডাকা হয়েছে সেখানে একইভাবে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু কোনকিছুতেই মানুষকে আটকে রাখা যায়নি। সিলেটেও পরিবহন ধর্মঘট মহাসমাবেশে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বিকল্প পন্থায় যে যেভাবে পারে কষ্ট করে হলেও সমাবেশে আসবে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেছেন। তারা সমাবেশস্থলে তৈরি করা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। সেখানেই তারা রাত্রিযাপন করবেন। পরিবহন ধর্মঘটে বিএনপির কোন ক্ষতি না হলেও সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়েকশ’ মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করেছে ছাত্রলীগ। সমাবেশস্থলের পাশে গিয়ে তারা ঘন্টাখানেক অবস্থান করে সমাবেশ করেছেন। এসময় তারা মূহুর্মূহু বিএনপি বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। 

ছাত্রলীগের শোডাউন ও বিভিন্ন স্থানে হামলা, মামলায় নেতাকর্মীরা আতঙ্কিত কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন আর কিছুতেই ভয় পায় না। ১৪ বছর ধরে তাদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই নতুন করে তাদের আতিঙ্কত বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে গণসমাবেশ সফল করবে নেতাকর্মীরা।

চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সকল বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সিলেটে সমাবেশ করবে দলটি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


এসই/০২