সিলেট মিরর ডেস্ক
জুন ১৩, ২০২৫
১১:৫৮ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ১৪, ২০২৫
১২:১৫ পূর্বাহ্ন
সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
গতকাল শুক্রবার লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ ব্রিফিংয়ে এই কথা জানানো হয়।
যৌথ ব্রিফিংয়ে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আজ শুক্রবার (১৩ জুন) যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) বৈঠকটি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টা) বৈঠক শেষ হয়।
দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
‘তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।’
এর আগে, বৈঠক শেষে পার্ক লেনের হোটেল থেকে তারেক রহমানকে হাসিমুখে বের হতে দেখা গেছে।
পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও আবার নির্বাচনের তারিখ প্রসঙ্গে কী আলোচনা হলো জানতে চান সাংবাদিকরা। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনী রোডম্যাপে নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সমস্যা কোথায়? এর জবাবে ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এতে কোনও সমস্যা নেই। আমরা কোনও সমস্যা দেখি না। কেউ দেখলে ভুল দেখছেন। নির্বাচন সম্পর্কে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আমরা আশা করব, শিগগিরই তারা একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’
পূর্বের সংবাদ: বৈঠক শেষে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা বললেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট’ |
বৈঠকে শুধু নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে, নাকি রাজনৈতিক অন্যান্য বিষয়েও কথা হয়েছে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটি করবো। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরেও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐক্যমত হয়েছি, তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
সংস্কার নিয়ে বর্তমান সরকারের যে রূপরেখার তালিকা দিয়েছে- সেটি নিয়ে বিএনপি কী ভাবছে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘এটা পরিষ্কার, এখানে না বোঝার কোনও কারণ নেই। সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সাহেব, তারেক রহমান সাহেব- সবাই একই কথা বলছেন। যে বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোতেই তো সংস্কার হবে, তাই না? সংস্কারের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। এমন না যে সব সংস্কার এখনই শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কার হবে, নির্বাচনের পরেও কিছু সংস্কার অব্যাহত থাকবে।’
এসময় তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান যেকোনও সময় দেশে ফিরতে পারেন। সুতরাং এটার সিদ্ধান্ত উনি নেবেন সময়মতো।’
এপ্রিলের ঘোষিত নির্বাচনী রূপরেখা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সরে আসছে কিনা- জানতে চাইলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টা সুস্পষ্ট বলা আছে। যদি সব কাজ আমরা সময়মতো করতে পারি, বিচার এবং সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তাহলে নিশ্চয় সেটা করা হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে উভয়পক্ষই সস্তোষ প্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। আমরা তো বলছি, নির্বাচনের আগেই না, নির্বাচনের পরেও দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। আর সন্তুষ্ট না হলে যৌথ ঘোষণা আসতো না।
এসময় জুলাই সনদ নিয়ে ড. ইউনূস-তারেকের বৈঠকে কোনও আলাপ হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে দেশে। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে এবং সংস্কারের বিষয়েও আমাকে একই উত্তর দিতে হয়, ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার এবং জুলাই সনদ হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি হবে।’
আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক শুরু হওয়ার আগে দুই শীর্ষ ব্যক্তিত্ব নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন।
এএফ/০৯