নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২০, ২০২২
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ২০, ২০২২
০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের দাবি সুস্পষ্ট-অবিলম্বে শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করতে এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
গতকাল শনিবার সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক—শ্রমিক মেহনতি জনতা, যে ভ্যান ঠেলে, ঠেলাগাড়ি চালায়, নৌকায় বইঠা বায়, কৃষিতে ফসল ফলায়Ñতাঁরা এখন শান্তিতে নেই। গতকালও তেলের দাম আবার বেড়েছে, চিনির দাম বেড়েছে, শাক—সবজি—লবণ—ডিম সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমার সেই কৃষক ভাই, কৃষক মা তাঁর ছেলেকে একটা ডিম দিতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১৪ বছর ধরে দেশে অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার কী নির্বাচিত? ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে? হয়নি। আর ২০১৮ সালে আগের রাতেই ভোট শেষ। তারপর তারা বলে, আমরা ভোটে জিতেছি। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিল অধিকার আদায়ের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, কথা বলার স্বাধীনতার জন্য। সেই অধিকারগুলো হরণ করার জন্য, চুরি করার জন্য, ডাকাতি করার জন্য, মানুষের স্বপ্নকে খানখান করে দেওয়ার জন্য এই হাসিনা সরকারের বিচার হবে জনতার আদালতে।’
সিলেটের ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ তুলে ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী এখন আমাদের মাঝে নেই। আমরা জানি না, তিনি বেঁচে আছেন কি না। তাঁর সন্তান প্রতিদিন তাকিয়ে থাকে, এই বুঝি বাবা ফিরবে। ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাঁর নিখোঁজ হওয়ার পরও দমে যাননি, হেরে যাননি। তিনি এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই—সংগ্রাম চালু রেখেছেন। তাঁকে আমার স্যালুট। এমন ছয় শ মানুষ, ড্রাইভার আনসার আলী, দিনার, জুনায়েদÑসিলেট থেকে তাঁরাও নিখোঁজ হয়ে গেছে। কামালকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ঢাকার সুমন, ইমন সব নিখোঁজ হয়ে গেছে। তাঁদের মা, বাবা, স্ত্রী পুত্রÑতাঁরা জানেন এরা কোথায়?’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার নতুন করে খেলা শুরু করেছে। মামলা মামলা খেলা। গায়েবি মামলা। কোনো কিছু ঘটে নাই, হঠাৎ বলে আমরা নাকি নাশকতা করছি। এই নাশকতার মামলার আসামি ১১৪, ২১৪, ৪০০, ৪৫০। এভাবে ১৪ বছর ধরে তারা এ দেশের মানুষের ওপরে অত্যাচার—নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যে মামলা করে আটক করে রেখেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হুমকি দেয় যে, খেলাফতে মজলিশের মতো অবস্থা হবে, হেফাজতের মতো অবস্থা হবে। হুমকি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী যে, আমরা যদি কোথাও আন্দোলন করতে যাই তাহলে হেফাজতের মতো অবস্থা হবে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এবার মানুষ জেগে উঠেছে, এবার ওই সব হুমকি—ধমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। এই মানুষ এই যে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে, আর ঘরে ফিরবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব লম্বা লম্বা কথা বলে। বলে যে, সংবিধান অনুযায়ী নাকি নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তুমি দশবার কাটা ছেঁড়া করেছ, যে সংবিধান তুমি নিজে নিজে তৈরি করেছ।’ তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না; যারা বিরোধিতা করবে, তারা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে, তাদেরকে চিহ্নিত করা হবে গণশত্রু হিসেবে।’
এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ লড়াই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেশে শান্তি চাই। অশান্তি চাই না। আমাদের দফা এক, দাবি এক। শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ। সবাইকে এই দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আর বসে থাকার সময় নেই। আমরা সকলে এক হয়ে লড়াই করে জনগণের একটি সরকার, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি।
সিলেটের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। এ যুদ্ধ আপনাদের মুক্তির যুদ্ধ, অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। ভাতের অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। এই সিলেটের মাটি থেকে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সিলেটের যুদ্ধ থেমে থাকেনি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের নেতা সাইফুর রহমান বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মুক্ত করতে নতুন যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। আজকের যে আধুনিক বাংলাদেশ, সেটাও তিনি করেছিলেন। আপনাদের ইতিহাস হচ্ছে গর্বের ইতিহাস, যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস। এ জন্যই আজ বললাম, যুদ্ধ এই পুণ্যভূমি থেকেই শুরু হলো। এই যুদ্ধে অবশ্যই আমরা জয়লাভ করব।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী, যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও সালেহ আহমদ চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, তাহসীনা রুশদীর ও এনামুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান, সাবেক সংসদ সদস্য নাসের রহমান, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এএন/বিএ