নর্থ ইস্ট মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
০২:৩২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
০৬:১০ অপরাহ্ন



নর্থ ইস্ট মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম


সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এর মধ্যে কলেজের দুই ছাত্রী উত্যক্তকারী যুবক ও তাদের উপর ‘হামলাকারীদের’ গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা। 

রবিবার রাত ১১টার দিকে তারা এ ঘোষণা দেন। 

এর আগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং অটোরিকশা শ্রমিকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করার জের ধরে রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালের অদূরস্থ সুমাইয়া কমপ্লেক্স নামক মার্কেটের সামনে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন বলে হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮-১০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দক্ষিণ সুরমা থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মাঈন উদ্দিন খানও রয়েছেন। তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজে অধ্যরনরত নেপালিয়ান দুই ছাত্রী এক প্রয়োজনে চন্ডিপুলের ফুলকলি মিষ্টির দোকানে গেলে আসার সময় স্থানীয় এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক তাদের উদ্দেশ্য অশালীন কথা বলেন এবং উত্যক্ত করেন। ওই অটোরিকশা চালক নর্থ ইস্ট হাসপাতালের অদূরস্থ সুমাইয়া কমপ্লেক্স নামক মার্কেটের নিচ তলার বাদশা টেলিকম নামক ফ্লেক্সিলোডের দোকানের মালিক গুলজার আহমদের আত্মীয়।

ইভটিজিংয়ের শিকার দুই ছাত্রী কলেজে গিয়ে সহপাঠীদের বিষয়টি জানালে কয়েকজন শিক্ষার্থী বাদশা টেলিকমে এসে বিচারপ্রার্থী হন। এসময় দুপক্ষের মাঝে বাবকবিতন্ডার সৃষ্টি হয় এবং একপর্যায়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শামিল হয়ে এসময় স্থানীয় অটোরিকশা চালকরা শিক্ষার্থীদের মারধর করেন।  এতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষকালে দক্ষিণ সুরমা থানার সহকারী কমিশনার (এসি) আহত হন এবং মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। 

পরে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। 

এদিকে, নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ করে বলছেন- প্রতিনিয়ত তাদের সহপাঠী নারী শিক্ষার্থীরা চন্তিপুল এলাকার অটোরিকশা শ্রমিক এবং ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। সম্মানের ভয়ে বেশিরভাগ ছাত্রীই এসব বিষয় কারো সঙ্গে শেয়ার করেন না। আজ (রবিবার) বিদেশি দুই ছাত্রীকে উত্যক্ত করায় তারা সাহস করে সহপাঠীদের কাছে এসে বলেছেন। এই ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায়ই অটোরিকশা শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছেন। 

শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন- এই সময়ের মধ্যে উত্যক্তকারী যুবক ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। এছাড়াও মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের উত্যক্ত করা স্থায়ীভাবে বন্ধে পুলিশকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।  

অপরদিকে, এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বৈঠকে বসেছেন বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- শুরুতে বাদশা টেলিকমে এ ঘটনা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারা। অভিযুক্ত যুবককে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ানো হয়। কিন্তু এরপরও শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে হামলা করেন। তাদের মার্কেটের অনেক দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এখন তারা বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মূল ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’


এএফ/০২