কলাগাছের সুতায় 'কলাবতী' শাড়ি

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ০২, ২০২৩
০৩:৩০ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০২, ২০২৩
০৭:২৪ অপরাহ্ন



কলাগাছের সুতায় 'কলাবতী' শাড়ি


দেশে প্রথমবারের মতো কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি করে মনিপুরী শাড়ি বুনলেন মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের বুনন শিল্পী রাধাবতী দেবী। বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের অনুরোধে বান্দরবানে গিয়ে এ শাড়িটি বুনেছেন তিনি। বুনন শিল্পীর নামের সঙ্গে মিল রেখে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজি শাড়িটির নাম রেখেছেন 'কলাবতী'।

জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে কলাগাছ থেকে তন্তু তৈরি করা হতো। পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ তন্তু থেকে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করা হয়। সর্বশেষ এ তন্তু দিয়ে কমলগঞ্জের মনিপুরী তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এবং ১৫ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে শাড়িটি তৈরি করতে সফল হয়েছেন। বর্তমানে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাইং সাইং উঃ নিনি দম্পতির বাসায় কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি ও নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরির কাজ চলছে।

রাধাবতীকে এ কাজে সহযোগিতা করেছেন প্রভাষক সাইং সাইং উঃ নিনি এবং বান্দরবান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী।

বান্দরবান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, 'জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে কলাগাছের তন্তু থেকে প্রথমবারের মতো বান্দরবানে শাড়ি তৈরি করা হযয়ছে। আমরা এ কাজে বুনন শিল্পীকে সহযোগিতা করেছি। আমাদের জনবল আছে; তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রথমবারের মতো আমরা সনাতন পদ্ধতিতে শাড়িটি বানিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে তৈরির জন্যও জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিবেন।'

কমলগঞ্জের মনিপুরী তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী বলেন, 'জেলা প্রশাসকের ডাকে সাড়া দিয়ে বান্দরবানে এসে শাড়িটি বুনেছি। আমার এলাকায় যারা মনিপুরী শাড়ি বুনেন, সবাই আমাকে বলেছিলেন এ দায়িত্ব না নিতে। তারপরও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হই। ১৯৭৫ সাল থেকেই সুতা দিয়ে শাড়িসহ নানা কিছু তৈরি করেছি। কিন্তু কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি ছিল আমার কাছে একেবারেই নতুন। দীর্ঘ ১৫ দিনের চেষ্টায় আরো তিনজন সহযোগীকে নিয়ে তাঁতে বসে তৈরি করে ফেলি জামদানি ডিজাইনের কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি শাড়ি। সাধারণ সুতায় ৫০০ গ্রাম দিয়ে যেখানে একটি শাড়ি তৈরি করা যায়, সেখানে কলাগাছের সুতায় শাড়ি তৈরি করতে লাগে প্রায় এক কেজি। কলাগাছের সুতা তৈরিতে গবেষণা করে ভালো সুতা তৈরি করতে পারলে আরো ভালো মানের শাড়ি তৈরি করা যাবে।'

মৌলভীবাজারের মনিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্সের কালচারাল সেক্রেটারি ইবুংহাল সিংহ শ্যামল বলেন, 'কলাগাছের তন্তু থেকে সুতো তৈরি করে শাড়ি বুনন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আর এ কাজে আমাদের এলাকার বুনন শিল্পী রাধাবতী সফল হয়েছেন। কলা গাছের তন্তু থেকে যদি শাড়ি তৈরি করে বাজারজাত করা যায়, তবে তাঁতীরা অনেক লাভবান হবে। কেননা সুতার বাজারমূল্য দিন দিন শুধু বেড়েই চলছে। সরকারের কাছে দাবি জানাই, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কলা গাছের তন্তুর সুতার শাড়ি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি উদ্যোগ নেওয়া হোক।'

ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, 'পর্যটননগরী বান্দরবানে মূলত পর্যটকদের কথা চিন্তা করে কলা গাছের তন্তু থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে আসছেন স্থানীয় নারীরা। পর্যটকদের কাছে এসব হস্তশিল্প সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কম খরচে স্বল্প সময়ে কলাগাছের তন্তু থেকে আর কী তৈরি করা যায়, সে ভাবনা থেকেই শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রথমবারেই আমরা সফল হয়েছি। আশা করি, কলা গাছের তন্তুর শাড়ি কলাবতী পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'কলাগাছের তন্তু থেকে সফলভাবে শাড়ি তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। আমি জানি না বাংলাদেশের আর কোথাও এখন পর্যন্ত কলাগাছের সুতা থেকে কেউ শাড়ি তৈরি করেছেন কি-না! যদি না করে থাকেন তবে এটিই হবে কলাগাছের সুতার প্রথম শাড়ি।'

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এ শাড়ি উৎপাদন সম্ভব হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি তারা আর্থিকভাবেও লাভবান হবে। এছাড়া বান্দরবান ছাড়াও দেশের আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডিং হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, প্রাথমিকভাবে শাড়ি তৈরিতে ১৮০ টাকার সুতা ব্যবহার হয়েছে। তবে সময় ও শ্রম বেশি লাগায় শাড়ির বিক্রয় মূল্য ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।


সুত্র: দেশ রূপান্তর 


এসই/০৫