‘১৩ বছরে শান্তি রক্ষায় ৯৬০ নারী নিপীড়নের শিকার’

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ২৭, ২০২৩
০৪:৪১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ২৭, ২০২৩
০২:১৫ অপরাহ্ন



‘১৩ বছরে শান্তি রক্ষায় ৯৬০ নারী নিপীড়নের শিকার’


জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে থাকা ৯৬০ নারী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্স বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত যৌন নিপীড়নের এসব ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নমূলক ঘটনা প্রতিরোধ ও অসমতা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের লাক্রোয়া। 

আগামী ডিসেম্বরে ঘানায় অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে ঢাকায় প্রথম প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার (২৬ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে দুদিনের প্রস্তুতি সভার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জ্যঁ পিয়ের। সভায় অন্য বক্তারাও নারীর জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্র তৈরির ওপর জোর দেন। ঢাকায় প্রস্তুতিমূলক বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘জাতিসংঘ শান্তি রক্ষায় নারী’।

জ্যঁ পিয়ের বলেন, জাতীয় পর্যায়ে ও শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। 

তিনি বলেন, সমতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো শনাক্ত করতে সবাইকে এক হতে হবে। এ লক্ষ্যে সামরিক ক্ষেত্র ও বিশ্বজুড়ে নারীর সাম্প্রতিক যে পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে হবে। এই পরিবর্তন আনতে হবে শান্তি রক্ষা কার্যক্রমেও।

জ্যঁ পিয়ের বলেন, নারীর ক্ষেত্রে জাতিসংঘ পাঁচটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে তা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে। পাঁচটি বিষয় হচ্ছে- প্রথমত : নারী যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে সেগুলোর তথ্য–প্রমাণ জোগাড় করা। প্রস্তুতি সভায় কিছু দেশ প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে ভালো উদাহরণ তৈরি করেছে, সেগুলো যেন অন্য সদস্য দেশগুলো অনুসরণ করে এবং সমস্যা সমাধানে উন্নয়নশীল দেশগুলো আর্থিক সহায়তাও চাইতে পারে। 

দ্বিতীয়ত : প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে নারীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। 

তৃতীয়ত : জাতীয় পর্যায়ে এবং শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর জন্য জেন্ডার–বান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে।

চতুর্থত : নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, সহিংসতা ও বৈষম্য দূর করতে জাতিসংঘ যেভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়, সেটা যেন অন্য দেশও অনুসরণ করে।

পঞ্চমত : জাতীয় পর্যায় থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং ইতিবাচক বিষয়গুলো চর্চা করতে হবে। এ বিষয়ে বিভিন্ন খাতের নারীদের জন্য জাতিসংঘের যে প্রকল্প রয়েছে, তা অনুসরণ করে প্রয়োগ করা।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর নারীরা যেন নেতৃত্বের অবস্থানে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশে সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের ঘটনা খুবই কম। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে যেসব নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তা কমানোর লক্ষ্যে ডিসেম্বরে ঘানায় অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা করার আহ্বান জানান।

বিভিন্ন দেশে শান্তি রক্ষা বাহিনীর ওপর ঘটে চলা সহিসংতা প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল মুহিত বলেন, শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর সংখ্যা বাড়াতে জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব এবং পরিবেশগত বৈষম্য কমানোর বিষয়গুলোও আলোচনায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।

বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. কামরুল আহসান বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ নারী পুলিশ অনুসরণীয় ভূমিকা পালন করছেন। নারীদের কাজের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত হয়েছে, তা দূর করে শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্স বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথরিন পোলার্ড বলেন, জাতিসংঘের নীল পতাকার নিচে নারীর জন্য নিরাপদ, শ্রদ্ধাশীল ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। যৌন শোষণ ও অসদাচরণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মহাপরিচালক (শান্তি ও স্থিতিশীলতা কর্মসূচি) উলরিক শ্যানন বলেন, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য তার দেশ এ ক্ষেত্রে অনুসরণীয় পথপ্রদর্শক হতে পারে।

নারীর জন্য সমান সুযোগের কর্মপরিবেশ তৈরিতে যেসব বাধা রয়েছে তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান উরুগুয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (রাজনৈতিক) লুইস বেরমুদেজ এবং জাতিসংঘের পুলিশ উপদেষ্টা ফয়সাল শাহকার।


এএফ/০৩