বিড়ালের মহাকাশ জয়ের ৬০ বছর

সিলেট মিরর ডেস্ক


সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
১০:২৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
১০:২৫ পূর্বাহ্ন



বিড়ালের মহাকাশ জয়ের ৬০ বছর

মহাকাশে প্রথম প্রাণী হিসেবে লাইকা নামের কুকুরের কথা তো আমরা সবাই জানি। সেই যে গত শতাব্দীর পঞ্চম দশকের সপ্তম বছরে (১৯৫৭) মহাকাশে সোভিয়েত কুকুর স্পুটনিক-২ খেয়াযানে করে পাড়ি জমায়। পৃথিবীর কক্ষপথে গিয়ে প্রথম প্রাণী হিসেবে পুরো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে সে। এর আগে ১৯৪৮ সালে অ্যালবার্ট–১ নামের এক বানরকে মহাকাশে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। অ্যালবার্টের রকেট ৩৯ মাইল উঁচুতে কারিগরি ত্রুটিতে ধ্বংস হয়।

১৯৪০-এর দশকে মার্কিন বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলের বাইরে প্রাণী পাঠানোর উদ্যোগ নেন। শুরুতেই তাঁরা পরিকল্পনা করেন মাছি পাঠাবেন। সেবার ভি-২ রকেট ভর্তি করে একদল মাছিকে মহাকাশে পাঠানো হয়। ১০৯ কিলোমিটার ওপরে মাছিরা ভ্রমণ করে। বায়ুশূন্য অবস্থা ও প্যারাসুটের দুর্বলতার কারণে অনেক মাছি মারা যায় সেই অভিযানে।

কুকুর কিংবা বানর–শিম্পাঞ্জিকে হরহামেশাই মহাশূন্যে নানা গবেষণার জন্য পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ ছিল বানর-শিম্পাঞ্জি আর রাশিয়ার ছিল কুকুর। কচ্ছপকেও পাঠানো হয়েছে চন্দ্রকক্ষপথে; পাঠানো হয়েছে জেলিফিশ পর্যন্ত। মাকড়সার মহাকাশ জয় হয়েছে ১৯৭৩ সালে। লাইকার বীরত্বের কথা আমরা পড়লেও ফেলিসেট বিড়ালের মহাকাশ জয়ের গল্প খুব একটা পড়ি না।

প্রায় ৬০ বছর আগে ফরাসিরা মহাশূন্য জয় করতে ফেলিসেট নামের এক বিড়ালের শরণাপন্ন হয়। প্রথমবার এবং সেই একবারই মহাশূন্যে পাড়ি জমায় কোনো বিড়াল। সাদা-কালো দেখতে ছোট একটি পারসিয়ান বিড়াল ছিল ফেলিসেট। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ১৯৬৩ সালের অক্টোবরে যায় সে। পৃথিবী পৃষ্ট থেকে ১৫৪ কিলোমিটার ওপরে মহাশূন্যে সফর করে ফেলিসেট নামের সেই বিড়াল। এখনো পর্যন্ত সেটাই হচ্ছে পৃথিবীর কোনো বিড়াল প্রজাতির প্রাণীর সর্বোচ্চ অবস্থান। এরপরে আর কোনো বিড়ালকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়নি।

সেই সময় ফরাসি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সেরমা ১৪টি ভবঘুরে বিড়াল সংগ্রহ করে। রাস্তার বিড়াল বলা হলেও আসলে এক পোষাপ্রাণীর ডিলার বিড়ালগুলো সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন। গবেষকদের বিড়ালের প্রেমে পড়ার সম্ভাবনা থেকে প্রথম দিকে বিড়ালের কোনো নামকরণ করা হয়নি। সি-৩৪১ নামেই ডাকা হতো সব কটিকে। প্রায় দুই মাস মানুষের মতো মহাকাশ অভিযানের প্রশিক্ষণে অংশগ্রণ করে বিড়ালগুলো। ১৯৬৩ সালের ১৮ অক্টোবর যাত্রার দিন নির্ধারিত হয়। ভেরোনিক ধরনের রকেটে চড়ে পাঠানো হবে ফরাসি খেয়াযান। কেউ মহাকাশে যাবে আর নাম না থাকলে কেমন দেখায়? সেই প্রশ্নের উত্তরে ১৯১৯ সালের কার্টুন চরিত্র ‘ফেলিক্স দ্য ক্যাট’ অনুসারে নাম রাখা হয় ফেলিক্স। পরে দেখা যায়, ফেলিক্স কার্টুন চরিত্রটি ছিল পুরুষ বিড়ালের আর মহাশূন্যে যাবে নারী বিড়াল। ফেলিক্সের নাম বদলে রাখা হয় ফেলিসেট।

রয়েল অবজারভেটরি গ্রিনউইচের জ্যোতির্বিদ জেক ফস্টার জানান, ষাটের দশকে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা নভোযানে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ গুরুত্ব দিতেন। বিভিন্ন প্রাণীকে মহাশূন্যে পাঠানো হয় ভবিষ্যতের মানুষের অভিযাত্রার নানা বিষয়কে জানতে। ফেলিসেটের মাথায় ইলেকট্রোড বসানো হয়। সেই ইলেকট্রোডের তথ্য থেকে গবেষণা করেন জ্যোতির্বিদেরা। সেই সময় তো ধারণা ছিল না ওজনহীন অবস্থা কিংবা মহাকাশের বিকিরণ মানুষের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে। সেসব প্রাণীদের কারণেই মানুষের মহাকাশ যাত্রার নানা পথ উন্মোচিত হয়। ফেলিসেট বিখ্যাত না হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে স্নায়ুযুদ্ধ। তখন যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়নের সব ঘটনাই গুরুত্ব পেত। তাই ফরাসিদের মহাকাশযাত্রা নিয়ে তেমন আলোড়ন তৈরি হয়নি।

মহাশূন্য থেকে জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতে ফেরত আসে ফেলিসেট। লাইকার মতো মহাকাশেই চিরঘুমে যেতে হয়নি তাকে। মহাশূন্য জয়ের দুই মাস পরে তাকে গবেষণা টেবিলে আসতে হয়। বিজ্ঞানীরা ফেলিসেটের ওপরে নানা পরীক্ষা চালান। ফেলিসেটের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করে গবেষণার চেষ্টা করা হয়। সেই গবেষণায় আসলে তেমন কোনো সাফল্য বা নতুন তথ্য জানা যায়নি। ফেলিসেটের পরে আর কোনো বিড়াল বা মানুষ মহাকাশে পাঠানোয় আগ্রহ দেখায়নি ফ্রান্স।

আরসি-০২