একই মঞ্চে সিলেটের আইনজীবী পিতা আর আইন শিক্ষার্থী কন্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
১২:৫১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
১২:৫২ পূর্বাহ্ন



একই মঞ্চে সিলেটের আইনজীবী পিতা আর আইন শিক্ষার্থী কন্যা

সন্তানদের নিজের পেশায় দেখতে চাওয়া অভিভাবকদের সংখ্যাটা সীমিত। যেমন চিকিৎসক বাবা-মা চান তার ছেলে-মেয়েও যেন চিকিৎসা পেশাকে বেছে নেয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে এই প্রবণতা খুব একটা চোখে পড়ে না। আবার বাবা-মায়ের পেশাকে অনুসরণ করা সন্তানের দেখা মেলাটাও যে দুষ্কর। তবে এক্ষেত্রে আইনজীবী শশাংক শেখর পাল ব্যতিক্রম। শুধু যে ব্যতিক্রম তাই নয়, সন্তানের সঙ্গে তিনি মিশে গেছেন সতীর্থের মতো। তাঁর মেয়ে শ্রাবন্তী পাল শৈলীও যে বাবার সঙ্গে ছায়ার মতো ছুটে চলেছে।

গল্পটা একটু ভেঙ্গেই বলা যাক। সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির আইন ও বিচার বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী। আর তার বাবা শশাংক পাল সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য। ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের একজন সদস্য। 

সম্প্রতি বাবা-মেয়েকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা গেছে সতীর্থের ভূমিকায়। গত ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শৈলী 'অবিবেচিত শিল্পায়ন এবং এর ফলে সৃষ্ট মানবাধিকার লংঘন বিষয়ে' নিজের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। যে প্রবন্ধটিতে তার সহ-লেখক তাঁর পিতা শশাংক শেখর পাল। 

আইন মূলত একটি পেশাগত বিষয়। আইনে ডিগ্রি অর্জন করে আইন সংশ্লিষ্ট পেশার নানা ক্ষেত্রে একজনের নিজেকে সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সবক্ষেত্রেই বিশ্লেষণ দক্ষতা, আইনের বিধি-বিধান, নজীর উল্লেখপূর্বক যুক্তি উপস্থাপনের লিখিত ও বাচনিক কৌশল ভালোভাবে রপ্ত করতে হয়। পেশাগত জীবনে পদার্পণ করলে আদালতের নানা প্রায়োগিক বিষয়ে শৈলী যে বাবার থেকে শিখে নেবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এর পূর্বে পিতার সাথে যৌথভাবে আইন সংশ্লিষ্ট একটি গবেষণা কাজ সম্পাদন তার মনোবল বাড়াতে যে সাহায্য করবে, সেটাও অনুমান করাই যায়। 

বাবার আইন চর্চার ক্ষেত্র দেওয়ানী অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ। মেয়েও সে পথে হাঁটতে চান। শৈলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গবেষণায় আগ্রহ মানবাধিকার আইন সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ। আইনের নানা বিষয়ের মধ্যে তাঁর আগ্রহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণার আগ্রহ জন্মে চূড়ান্ত বর্ষ শুরুর প্রাক্কালে। ইতিমধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অনুষ্ঠিত জাতীয় আইন সম্মেলনে তিনি তাঁর একটি একক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন।

শৈলী অবসরে ছবি আঁকেন। নিয়মিত আবৃত্তি চর্চা করেন। নতুন ভাষা শেখায় তার রয়েছে ভীষণ আগ্রহ। ফরাসী ভাষা সংশ্লিষ্ট এ২ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন ইতোমধ্যে।

শৈলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই তার বাবার পেশার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ। ছেলে-মেয়ের মধ্যে অন্তত একজন আইন পেশায় আসুক সেটা বাবা শশাংকও চাইতেন। মেজ সন্তান শৈলী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে বাবা তাকে ভর্তি করে দেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে। তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন ও বিচার বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে এলএল.বি.(অনার্স) প্রোগ্রামের ৪৪তম ব্যাচে ভর্তি হয়ে অপেক্ষায় আছেন আইনে সম্মান-সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য।

উল্লেখ্য, শ্রাবন্তী পাল শৈলী আগামী ৬-৭ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ আয়োজিত আইন সম্মেলনেও একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। এছাড়াও আগামী ১৭-২৭ অক্টোবর বাংলাদেশে আইন শিক্ষাজগতের দিকপাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান-এর তত্ত্বাবধানে মানিকগঞ্জের কৈট্টাতে অনুষ্ঠিতব্য ২২তম হিউম্যান রাইটস সামার স্কুলে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আরসি-০১