সিলেট মিরর ডেস্ক
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
০৮:২৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
০৮:২৫ পূর্বাহ্ন
আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের মর্মন্তুদ দিন। বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণার দিন।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষলগ্নে বাঙালি যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই এ দেশীয় নরঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি মেধার নৃশংস নিধনযজ্ঞ আনন্দোন্মুখ জাতিসহ গোটা বিশ্বকেই হতবিহ্বল করে তোলে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তারা।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঘাতক চক্র কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। সান্ধ্য আইনের মধ্যে সেই রাতে তালিকা ধরে ধরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় নিস্তব্ধ ভূতুড়ে অন্ধকারে।
পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলাতে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় নিথর দেহ। এ যেন বাঙালির সংস্কৃতি ও সভ্যতার এক নির্মম বধ্যভূমি। কারও শরীর বুলেটবিদ্ধ, কারও অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়িভুঁড়িও বের করে ফেলা হয় অনেকের। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে উন্মুখ মানুষ স্বজন হারানোর সেই কালরাত্রির কথা জানতে পেরে শিউরে উঠেছিল। স্থবির হয়ে গিয়েছিল সবকিছু। তখনও উল্লাসে নৃত্যরত নরঘাতকরা।
বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এই বুদ্ধিজীবীরা মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকে উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম যেন কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের।
১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। এই তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র গ্রুপ কুখ্যাত আলবদর ও আলশামসের হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
শোকের আবহে আজ পালিত হবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে, শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়বে। দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কর্মসূচিতে রয়েছে– শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৭টা ৫ মিনিটে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ নিবন্ধ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে রয়েছে– সূর্যোদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু ভবনসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সকাল ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ও সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও নেতারা বক্তব্য দেবেন।
বিএনপি ভোরে দলীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সকাল ৮টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবে।
এএফ/০৩