সিলেট মিরর ডেস্ক
এপ্রিল ০১, ২০২৪
১২:৫৮ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০১, ২০২৪
১২:৫৯ অপরাহ্ন
কাজ দেওয়ার প্রলোভনে সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার বিরুদ্ধে এক তরুণীকে আড়াই মাস ধরে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় সিলেট নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতার নাম আবদুস সালাম (৪০)। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। এ ছাড়া অভিযুক্ত অপর ব্যক্তি আবদুল মনাফ (৩৮) সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। তাঁকে কমিটি থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট মিরর-কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ।
তিনি বলেন, রোববার রাতে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি থেকে প্রায় আড়াই মাস এক তরুণীকে (১৮) আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাসহ এক নারীর নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই নারী আসামির নাম রেখা বেগম (৩০)। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তরুণী নগরের শেখঘাটের একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং শহরের একটি এলাকায় বসবাস করতেন। অভিযুক্ত রেখা বেগম তাঁর প্রতিবেশী। ভুক্তভোগীকে শহরের বাসায় রেখে গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন স্বজনেরা। এ সময় ওই তরুণীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেখা। ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘সালাম নেতা টাইপের লোক, বিপদে-আপদে উপকারে আসবে।’ ৭ জানুয়ারি রেখার মাধ্যমে তরুণীকে নিজের বাসায় নিয়ে যান সালাম। এরপর টানা ২২ দিন সালাম তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।
এজাহারে বলা হয়, এর মধ্যে ওই তরুণীর মা-বাবা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসেন। বাসায় মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যেতে চাইলে প্রতিবেশী রেখা বেগম তাঁদের সালামের কাছে নিয়ে যান। সালাম তাঁদের জিডি করতে নিষেধ করে নিজেই খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এর দুই দিন পর তরুণীর মা-বাবা আবার সালামের কাছে গেলে তিনি বিকেলের দিকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান।
ওই দিন বিকেলে তরুণীকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেন সালাম। এ সময় ওই তরুণীর স্বজনদের তিনি জানান, ওই তরুণী এক প্রবাসীর বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উদ্ধার করেছেন। স্বজনেরা প্রবাসীর নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে তরুণী মা-বাবাকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি জানালে সালাম তাঁদের হত্যার হুমকি দেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার তিন দিন পর আবার কাজে যাচ্ছিলেন তরুণী। তখন সালাম বিয়ে ও ভালো জায়গায় কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। কথামতো সালামের সঙ্গে আবার দেখা করেন ওই তরুণী। তিনি তরুণীকে কিছু টাকা দিয়ে নগরের কাজীরবাজার এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় পাঠান। সেখান থেকে অভিযুক্ত মনাফ তাঁকে হবিগঞ্জের বাহুবলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান।
সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ একাধিক ব্যক্তি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী কৌশলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিলেটে পালিয়ে আসেন। স্বজনেরা তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে তরুণীর মা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
ভয়ে এলাকাছাড়া তরুণীর পরিবার
ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের পর বিভিন্নভাবে হুমকি–ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই তরুণীর বাবা রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, মামলা দায়েরের পর তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আসামিদের ভয়ে তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা এলাকাছাড়া। তিনি অসুস্থ অবস্থায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়নি। অন্যদিকে মামলার আসামিরাও পলাতক। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এএফ/০৪