বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধান: দুদকে আবেদন ব্যারিস্টার সুমনের

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ২২, ২০২৪
০৩:০৮ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০২৪
০৩:০৮ অপরাহ্ন



বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধান: দুদকে আবেদন ব্যারিস্টার সুমনের

বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধান: দুদকে আবেদন ব্যারিস্টার সুমনের


পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বরাবর এ আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

আবেদনে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক। তিনি ৩৪ বছর সাত মাস চাকরি করে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যান।

অবসর গ্রহণের পর দেখা গেছে, বেনজীর আহমেদ তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন, যা তাঁর বৈধ আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অসম। কালের কণ্ঠ গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। এর মধ্যে ছয়টি কম্পানি, রাজধানীর উচ্চবিত্ত এলাকায় দামি ফ্ল্যাট ও বাড়ি, বেস্ট হোল্ডিংসে শেয়ার, ফাইভ স্টার হোটেল লা মেরিডিয়ান ঢাকার শেয়ার, গোপালগঞ্জের ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট’, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৪১৮ ডেসিম্যাল জমি রয়েছে।

এসব সম্পদ বেনজীর, তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের বৈধ আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক বেশি। বেনজীর আহমেদ তাঁর পদের অপব্যবহার করে বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। উপরোক্ত তথ্য ও পরিস্থিতিতে বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যার বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।

এদিকে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকে আবেদন করার পর ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের যে অভিযোগ এসেছে, এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে না দেখে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি দুদকে এসেছি।

দুদকে আবেদন করে এসবের অনুসন্ধান করতে বলেছি। কারণ সাবেক আইজিপির যদি এত সম্পদ থাকে তাহলে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যাঁরা সৎ কর্মকর্তা রয়েছেন তাঁরা খুব হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। যাঁরা সৎ আছেন, তাঁদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর যাঁরা অসৎ, তাঁরা অর্থ কামানোর প্রতিযোগিতায় নামবেন। এ অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে অসৎ কর্মকর্তারা বলবেন—আমরা বেনজীর হতে চাই।

যদি দুদক এসব অভিযোগের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমি হাইকোর্টে যাব।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ গত শনিবার নিজের ফেসবুকে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি কিছু স্বীকার করেছেন, কিছু অস্বীকার করেছেন। এখন আইজিপির ৩৪ বছরের চাকরিজীবনে বেতন হয় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। বেনজীর আহমদের সম্পদের হিসাব আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানলাম। হিসাবের বাইরে কী আছে—তা একমাত্র আল্লাহ জানেন। বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও মেয়েদের আয়ের কোনো উপায় ছিল না। এর পরও ছয়টি কম্পানি থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। গোপালগঞ্জে এক হাজার ৪০০ বিঘা জমি করেছেন। আর কিছুদিন সময় পেলে মনে হয় তিনি গোপালগঞ্জই কিনে ফেলতেন। বৈধ না অবৈধ তা পরের বিষয়। যে হারে তিনি সম্পদ বানিয়েছেন, আর কিছুদিন হলে হয়তো উনার জমির ওপর দিয়েই আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মাজারে যেতে হতো।’

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘এত সম্পদের রিপোর্ট আসার পর ভেবেছিলাম দুদক নিজেই হয়তো একটা উদ্যোগ নেবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে এত বড় দুর্নীতির বিষয়ে কেউ কি কোনো কথা বলবে না! দুদক নিজে কাজ না করলে নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব দুদককে একটু নড়েচড়ে বসার কথা বলা। আমরা বলছি না যে বেনজীর আহমেদ দুর্নীতি করেছেন। যে অভিযোগটি এসেছে তা বাংলাদেশের মানুষের সামনে, জাতির সামনে পরিষ্কার হোক। তিনি যেখানেই গেছেন, সেখানেই সম্পদ গড়েছেন। দুদক যদি এই আবেদন আমলে না নেয় তাহলে আমি হাইকোর্টে যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন হচ্ছে—দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়তে হবে। আমি এমপি হিসেবে এই প্রথম দুদকে এসেছি। যেসব জায়গায় দুর্নীতির বিষয়ে অন্যরা কথা বলবে না, আমার সাহস-সামর্থ্য থাকলে আমি কথা বলব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংসদ আইন প্রণয়নের জায়গা। সুযোগ পেলে সংসদে আমি দুদকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘একজন অপরাধী নিজে তার দোষ স্বীকার করে না। দুদক বলুক যে বেনজীরের কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। কোনো দুর্নীতি করেননি। সব সম্পদ সাদা পানির মতো। দুদক চেয়ারম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দুর্নীতিবাজরা এখন বুক ফুলিয়ে রাস্তায় হাঁটে। শুধু এ কথা বললেই উনার দায়িত্ব শেষ হবে না। দুর্নীতিবাজরা যেন বুক ফুলিয়ে হাঁটতে না পারে সে ব্যবস্থা উনাকে করতে হবে। আর যদি একেবারেই কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমাদের সবার দেশ ছাড়তে হবে।’

জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। কমিশনের অনুমতি পেলে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

জিসি / ০৩